স্বদেশ ডেস্ক;
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ইলমা চৌধুরী মেঘলা হত্যা মামলায় স্বামী ইফতেখার আবেদীন শাওনের তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ইলমাকে নির্যাতনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলেও হত্যার দায় স্বীকার করেননি। আজ রবিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আলোচিত এ মামলার অন্যতম দুই আসামি ইলমার শ্বশুর-শাশুড়িকে চার দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাজধানী বনানীর বাসিন্দা প্রবাসী ব্যবসায়ী ইফতেখার আবেদীনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ঢাবি ছাত্রী ইলমা। গত মঙ্গলবার বিকালে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয় শ্বশুরালয়ের লোকজন। তবে চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে ইলমার। নিহতের স্বজনদের দাবি, সন্দেহের বশে ইলমাকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুলিশের সুরতহালেও বেরিয়ে আসে শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন। ওই ঘটনায় ইলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে ইফতেখার, তার মা শিরিন আমিন ও পালক বাবা সাবেক সেনা সদস্য মো. আমিনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ইফতেখার আবেদীনকে রিমান্ডে পেলেও অন্য দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এদিকে দুই আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুলিশের দুর্বল নজরদারির বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। ‘জাস্টিজ ফর ইলমা’ ব্যানারে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে ঝড় চলছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। ইলমার ‘হত্যাকারীদের’ দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তুলেছেন তারা।
অন্যদিকে মেয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং তাদের বিচার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ইলমার বাবা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়ে অঝোরে কেঁদে-কেটে মেয়ে হত্যার বিচার চাইছেন তিনি। গত শুক্রবার ঢাকার ধামরাইয়ে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েও মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে অঝোরে কেঁদেছেন ইলমার বাবা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ধামরাই প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেয় কয়েকশ মানুষ। ইলমার বাড়ি ধামরাইয়ের পাঠানটোলা মহল্লায়।
নিহতের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, মেয়েকে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। বিয়ের পর স্বামী ও শ্বশুরপক্ষ ইলমাকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বলে। পড়া বন্ধ করতে না চাওয়ায় তার ওপর নির্যাতন নেমে আসে। এর পরও মেয়ে স্বামীর সংসার আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েকে মেরেই ফেলল ওরা।
তিনি আরও জানান, ইলমাকে ঢাবিতে পড়াশোনা করতে দিতে চাইত না তার শ্বশুর-শাশুড়ি। তাদের সঙ্গে একমত ছিলেন ইলমার স্বামীও। তবে নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী ইলমা চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করতে। ভালো ফল নিয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন এই তরুণী, যা নিয়েই শুরু কলহ। স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির পড়াশোনা বন্ধের নির্দেশ না মানায় ইলমার ওপর নেমে আসে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন। ঢাবিতে যেন যেতে না পারে এজন্য স্বামী ইফতেখার, শাশুড়ি শিরিন আমিন ও শ্বশুর মো. আমিন মিলে ইলমার মাথার চুল কেটে দেন। বিয়ের তিন মাস পর কানাডায় চলে যান ইলমার স্বামী। তবুও থামেনি নির্যাতন। শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন ইলমার ওপর। যা তার মৃত্যুর পর শরীরে স্পষ্টত ফুটে উঠেছে।
বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘ইলমার স্বামী ইফতেখারের তিন দিনের রিমান্ডে শেষ হচ্ছে আজ (শনিবার)। রিমান্ডে তিনি নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিলেও ইলমাকে হত্যার দায় স্বীকার করেননি। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে। রবিবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’ নতুন করে ইফতেখারের রিমান্ড চাওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি রবিবারই পরিষ্কার বলা যাবে। মামলার অন্য দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’