বাবা আজ ১০ দিন হলে ঘরছাড়ি এই উচেত (উঁচুতে) আসে আচি। এ কয়দিন যা পাচিলেম খায়য়া শ্যাষ। তুমি যকন আচ্ছেন, হামার নাম কোনা এ্যানা নেকে নেও বাহে।’ সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই আর্তি জানান রেললাইনে আশ্রয় নেওয়া জরিনা বেগম।
১৯৮৮ সালের পর ৩২ বছরের মাথায় এবারই এতবড় বন্যায় ঘরের ভিতর কোমর পানি উঠেছে জরিনার। পানি কমলেও ঘর থেকে পুরোপুরি পানি সরেনি। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া-ফুলছড়ি রুটের পরিত্যক্ত রেললাইনের ওপর আশ্রয় নেওয়া জরিনার স্বামী রিকশা চালান।
বন্যার পানি আসার পর থেকেই বেকার দিন কাটছে। ঘরের খাবারও শেষ। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ যা পেয়েছে তাও খেয়ে শেষ। এখন আবার কিছু পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছে পরিবারটি। এ সমস্যা শুধু জরিনার একার নয়। ওই রেললাইনের ধার দিয়ে যেতেই ৬০ বছর বয়সের মুনছুর আলী বলেন, বাবারে বাড়ি তলে যাওয়ায় ১০ দিন ধরে। এ জাগাত (জায়গায়) আচি। কিছু চাউল পাচিলেম। কেজি দুয়েক আচে।
একনা খাওয়ার পর কি খামো চিন্তাত আচি। অপরিচিত প্যান্ট শার্টওয়ালা কেউ এলেই ত্রাণ দেওয়া কিংবা তালিকা তৈরির জন্য আসা লোক ভেবে ভিড় জমায় এখানে আশ্রয় নেওয়া নারী-পুরুষ। অনেকের জমিজমা সামান্য থাকলেও ফসল ও খাবার নষ্ট হওয়ায় তারাও বিপাকে পড়েছেন।
তাদের মধ্যে আছিয়া, রহিমা, ইয়ারন, জামিলা, সোনালি ও শাহিদাসহ আশ্রয় নেওয়া অসংখ্য লোকজন তাদের দুর্দশার কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরতে অনুরোধ করেন। প্রয়োজনে তাদের নাম লিখে নিতেও অনুরোধ করেন। তাদের মধ্যে মোসাবেল হোসেন জানান, ভাই এরা তো সাংবাদিক বোঝে না। নামটা লিখলে কিছু পাবে, এমন চিন্তাই তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
গত শুক্রবার ও শনিবার সরেজমিন উপজেলার সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়কের প্রায় ৮ কিলোমিটার, বোনারপাড়া-বাদিয়াখালি রেললাইনের উপর প্রায় ৫ কিলোমিটার, হাপানিয়া-ভন্নতের মোড় সড়কে প্রায় ৪ কিলোমিটার ও কচুয়া এলাকায় ৫ কিলোমিটার উঁচু সড়ক ছাড়াও বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন ও উপজেলা পরিষদ এলাকায় ১০ দিন ধরে বসবাস করছেন অন্তত দুই হাজার পরিবার।
এ ছাড়াও উপজেলার ১০ ইউনিয়নের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সরকারি স্থাপনাগুলোতে বানভাসি পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালালেও তা দিয়ে প্রয়োজন মিটছে না। জনপ্রতিনিধির বাড়ি কিংবা কার্যালয়গুলোতে সবসময় ভিড় করছেন বানভাসি মানুষ। এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, এবার বানভাসির সংখ্যা অনেক বেশি। বরাদ্দকৃত ত্রাণ দিয়ে চাহিদা মিটছে না। ইউএনও’র কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে এ পর্যন্ত উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৩শ ২৩ মেট্রিক টন চাল ও জিআরের ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল কুমার ঘোষ জানান, ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠুভাবে চলছে। আরও বরাদ্দের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।