বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

অপরাধীর বিচার হয় অপরাধের আলোকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় না

অপরাধীর বিচার হয় অপরাধের আলোকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় না

স্বদেশ ডেস্ক:

রাষ্ট্র অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করে তার কৃত অপরাধের আলোকে। ধর্ম, বর্ণ গোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচার না এবং তা হওয়াও উচিত নয়। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের অবৈধ সম্পদের মামলায় আজ মঙ্গলবার ঢাকার সাত নম্বর বিশেষ জজ মো. শহিদুল ইসলাম রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনটাই মন্তব্য করেছেন।

পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘সাক্ষীদের জেরায় আসামি পক্ষের প্রদত্ত সাজেশন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারানুসারে আসামিকে পরীক্ষাকালে তার দাখিল করা লিখিত বক্তব্য ও যুক্তিতর্ক শুনানিকালে আসামি পক্ষ দাবি করেছেন যে, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ও কথিত মাইনাস-২ ফর্মূলা বাস্তবায়নে আসামিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়। এই বিষয়ে এক সাক্ষী জেরাতে বলেছেন যে, শুনেছেন তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখনকার বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের অনেক এমপি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুদক পক্ষের পি.পি আসামি পক্ষে ওই দাবির বিরোধীতা করে বলেন যে, আসামি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে অঢেল সম্পদ অর্জন করায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।’

আরও বলা হয়, ‘আসামিপক্ষের ওই দাবির প্রসঙ্গে বলা যায়, রাষ্ট্র অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করে তার কৃত অপরাধের নিরীখে। তার ধর্ম, বর্ণ গোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়। তা হওয়াও উচিত নয়। ফলে আসামির দাবি মোতাবেক দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অমান্য করে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করলে তার দায়ভার রাষ্ট্র বহন করবে না। বরং যে কোনো সভ্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনমতের ফসল সাংবিধানিক আইন লংঘনের ঘটনায় আইনানুগ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা।’

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয় ,‘এই মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ আইনানুযায়ী (দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪) আসামি প্রাক্তন স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে বর্তমান মামলাটি আনা হয়েছে। উন্মুক্ত বিচার পদ্ধতি অনুযায়ী বিচার হয়েছে এবং আসামি উপস্থিত থেকে তার নিয়োজিত কৌশুলীর মাধ্যমে জেরা করার সুযোগ পেয়েছেন। আসামির বিরুদ্ধে দুদক/প্রসিকিউশন পক্ষ দুটি অভিযোগ আনয়ন করে। তন্মধ্যে দুদক আসামির নালিশি বাড়ি নির্মানে ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে অর্জন করার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় এবং প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখার হিসাবে জমাকৃত ১০ লাখ ইউএস ডলার বা ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকার তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে অর্জনের দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামি লুৎফুজ্জামান বাবর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন প্রাক্তন আইন প্রণেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েও সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জন করায় তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর যথাক্রমে ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তি প্রদান যুক্তিযুক্ত মনে করি। তবে আসামির অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনাক্রমে আসামিকে সম্পদের তথ্য গোপনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জনের জন্য একই আইনের ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877