স্বদেশ ডেস্ক:
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, সংসদ ভবন এলাকায় চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে তার লাশ নেই। ওই কবরসহ সংসদ ভবনের মূল নকশার বাইরে যত স্থাপনা সব সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলে তা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী।দেশের মানুষ সেটি মানবে না।
যদিও ঢাকায় সংসদ ভবন এলাকায় চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্ন তোলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতার বাইরেও সংসদে ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সংসদ ভবন এলাকা থেকে ওই কবর সরিয়ে নেয়ার একাধিক প্রস্তাব উঠে আসছে গণমাধ্যমে। তবে এবারে রাজনৈতিক মঞ্চে এ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্কের সূত্রপাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি তিনি বলেছেন যে ওই কবরে জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না।
১৭ অগাস্ট চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের দিকে ইঙ্গিত করে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে যে মারামারী করলো বিএনপি, তারা জানে না যে ওখানে জিয়ার লাশ নেই? তারা তো ভালোই জানে। তাহলে ওই নাটক করলো কেন তারা? খালেদা জিয়াও খুব ভালোভাবে জানেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আরো শক্তভাবে এ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।
নকশার বাইরের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার চিন্তা করছে সরকার?
ঢাকায় শনিবার এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেছেন, ওই কবরে জিয়ার লাশ যে নেই, তা ডিএনএ টেস্ট করলেই প্রমাণ হবে। একইসাথে তিনি ওই কবরসহ সংসদ আঙ্গিনায় থাকা নকশা বহির্ভূত সব স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার দাবি করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই দিন আরেক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছেন যে ‘জানাজায় হাজার হাজার লোক হলেও ওই কবরে জিয়া নেই’।
কিন্তু এগুলো কি শুধুই রাজনীতি বা বিএনপিকে চাপের রাখার কৌশল, না কি সত্যিকার অর্থেই সরকার জিয়াউর রহমানের কবরসহ নকশার বাইরের স্থাপনা নেয়ার চিন্তা করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সংসদ ভবন এলাকা সংরক্ষিত ও নিরাপদ এলাকা। সেখানে গিয়ে বিএনপি গিয়ে মারামারী, নাশকতা ও বোমাবাজি করে। সংসদ ভবন একটি অনন্য স্থাপনা। লুই কানের যে নকশা সে অনুযায়ী এ ধরনের স্থাপনা না থাকাই যৌক্তিক ছিল। তবে সরকার সেটি সরিয়ে নেয়ার চিন্তা করছে- এমন কিছু আমার জানা নেই।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করেন এতদিন আওয়ামী লীগ নেতারা রাজনীতির জন্য জিয়াউর রহমানের কবর বা লাশ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এখন ওই কবর সেখান থেকে সরানোর বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না এলেও সরকারের অবস্থান শক্ত হচ্ছে। বিষয়টি আলোচনায় এসেছে শুক্রবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাতেও।
প্রতিক্রিয়া যাচাই করাও উদ্দেশ্য হতে পারে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন অবশ্য বলছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই হয়তো বিএনপিকে আরো বেশি চাপে রাখার কৌশল থেকেই দলটির প্রতিষ্ঠাতার কবরের বিষয়টি হয়তো সামনে এনেছে ক্ষমতাসীনরা। তার ভাষায়, হয়তো কবরটি সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বিএনপি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বিতর্কের মাধ্যমে তা পরিমাপ করাই আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার একটি অংশ হতে পারে।
বিএনপি যা বলছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর কোনো চিন্তা বিএনপি ও দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। এ ধরনের যদি তারা কোনো উদ্যোগ নেয়, সেটা হবে আত্মঘাতী। এর কোনো যুক্তি থাকবে না। এ দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না। সরকারের যে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল, সেটি পারেনি বলেই এ বিতর্ক তারা তুলতে চায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিএনপিকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা।
তবে কৌশলই হোক বা রাজনীতির মাঠ গরমের জন্য হোক, গত কয়েক বছর ধরে জনমনে ও বিশ্লেষকদের মধ্যে এ ধারণাও প্রকট হচ্ছে যে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যেভাবে ছাড়তে হয়েছে তেমনি সংসদ ভবন এলাকা থেকেও জিয়াউর রহমানের কবরসহ স্থাপনা সরিয়ে দেয়ার দাবি কার্যকরের চিন্তা সরকারের মধ্যে আসতে পারে।
সূত্র : বিবিসি