স্বদেশ ডেস্ক:
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রশমনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বিলুপ্ত কমিটির বাদ পড়া সক্রিয় নেতাদের নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এদিকে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে দক্ষিণের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের খোঁজে তার বাসার গেটে পুলিশ যাওয়ায় বিএনপিতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নতুন কমিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই দক্ষিণ বিএনপিতে এক নম্বর সদস্যপদ পাওয়া প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ক্ষোভ নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। তিনি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, সেখান থেকে লন্ডনে যাবেন। তার ব্যক্তিগত সহকারী সুজন মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৪টার ফ্লাইটে ইশরাক হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। অন্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ইশরাকের মূল গন্তব্য যুক্তরাজ্য। সেখানে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করবেন। নতুন কমিটি ঘোষণার পর ফেসবুকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দেন হাবিব উন নবী খান সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল ইলমি সূচনা।
তিনি লেখেন, ‘এতদিন শুনেছি গাধার পিঠে মেধা ঘোরে আজ হঠাৎ দেখছি ঘটনার উল্টোটাও হতে পারে, পৃথিবীটা বড়ই বিচিত্র জায়গা।’
বিএনপি নেতাদের সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার আগে-পরে দলের শীর্ষপর্যায় থেকে মহানগরের প্রভাবশালী নেতাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, নতুন কমিটিকে সহযোগিতা না করে কেউ যদি কোনো বিরূপ মন্তব্য করে তাকে সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তবে কমিটির নেতৃত্ব দেখে শাখা দুটির অনেকেই এ নিয়ে মন্তব্য করারও আগ্রহ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন ক্ষোভ সামাল দিতে পারেননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সিটি নির্বাচনের সময় ইশরাক হোসেন তার বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ভোটের মাঠে নামেন। মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও ইশরাকের পক্ষে প্রচারে নামেন। কিন্তু ভোটের পর সেই চিত্র পাল্টে যায়। ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলের কিছু সিনিয়র নেতার পরামর্শে ইশরাক ফের মির্জা আব্বাসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে থাকেন, যা ভালোভাবে নেননি মির্জা আব্বাস। একটা সময় ইশরাক ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব হওয়ার জন্য তারেক রহমানসহ নানা মাধ্যমে লবিং করতে থাকেন। কিন্তু তিনি কমিটিতে ‘দুধভাত’ হবেন নাÑ এমন কথা বলায় তারেক রহমান বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। এক পর্যায় হাবিব উন নবী খান সোহেল ও ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে দক্ষিণের কমিটিরও চেষ্টা করা হয়। ইশরাকের ঘনিষ্ঠ মহানগরের একাধিক নেতা জানান, আহ্বায়ক হিসেবে সোহেল ও সদস্য সচিব হিসেবে তাকে কমিটিতে রাখতে দক্ষিণের নেতাদের নিয়ে ইশরাক বৈঠকও করেছিলেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতাদেরও দেওয়া হয়েছিল।
দলীয় সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত কোনো চেষ্টাই কাজ না দেওয়ায় ইশরাক নতুন কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে থানা-ওয়ার্ড কমিটি অনুমোদনের ক্ষমতা চান। সেটাও না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন ইশরাক। মহানগরের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ইশরাকের এ পরিণতির জন্য তার বাবার ঘনিষ্ঠ সিনিয়র নেতারাই দায়ী। শেষ পর্যন্ত ওই সিনিয়র নেতারা আরেকজন নেতার পক্ষে অবস্থান নেন।
বিএনপি দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল বুধবার আমাদের সময়কে জানান, দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের খোঁজে তার বাসার গেটে দুই দফা পুলিশ গিয়েছিল। ফোন বন্ধ থাকায় সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান প্রিন্স।
গত সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্য এবং উত্তরে আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ৪৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।