স্বদেশ ডেস্ক:
আফগানিস্তানে ২০০১ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কাছে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। এরপরও দেশটি দখলে রাখতে তারা প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে। সম্প্রতি মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণায় আবার শক্তিশালী হয়ে উঠছে তারা। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সীমান্তবর্তী এলাকা দখলে নিয়েছে তালেবান।
বিবিসি’র আফগান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তালেবান তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকা যেমন গজনী ও মাইদান ওয়ারদাক এখন তালেবান অধ্যুষিত। এসব অঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন কুন্দজ, হেরাত, কান্দাহার ও লস্কর গাহের দখল নিতে মরিয়া তালেবান বাহিনী।
২০০১ সালে দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সেখানে আফগান সরকার ও বাহিনীর পেছনে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে মার্কিন প্রশাসন। তা স্বত্ত্বেও এত বছরেও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি তালেবান গোষ্ঠীকে। বরং কয়েকগুণ শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে তারা। এখন পর্যন্ত দেশটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলীয় হেলমান্দ, কান্দাহার, উরুযগান ও যাবুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তাদের দখলে রয়েছে। দখল হওয়া এসব এলাকায় দেশটির মোট জনবসতির প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস করে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি এলাকা তালেবানের দখলে চলে গেছে, যা বর্তমান সরকারের জন্য একটি হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধে হার মেনেছে আফগান সরকারি বাহিনী, আবার কিছু জায়গায় বিনা যুদ্ধেই পালিয়ে গেছে তারা। যদিও এখনো কিছু মার্কিন সেনা রয়ে গেছে কাবুলে এবং তাদের বিমানবাহিনী প্রতিনিয়ত তালেবানদের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে। এরপরও তালেবান শক্তির কাছে নাস্তানাবুদ হচ্ছে আফগান বাহিনী। তবে আফগান বাহিনী সেসব এলাকার দখল ধরে রাখার চেষ্টা করছে, যেগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে, তালেবান অধ্যুষিত এলাকাগুলোর জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
আফগান সরকার বলছে, তালেবান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তারা আবার সেনা পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে। তালেবানদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গত এক মাস ধরে পুরো দেশে চলছে রাত্রিকালীন কারফিউ।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে আফগান-তালেবান সংঘর্ষে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ। প্রায় ১ হাজার ৬০০ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর জন্য তালেবান এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে দুষছে জাতিসংঘ। হতাহত ছাড়াও বাস্তচ্যুত হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠন ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে বাদাশকান, কুন্দজ, বাগলান থেকে অনেক মানুষ পাশের এলাকাগুলোতে চলে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিজের দেশের সীমানা পার করে তাজিকিস্তানে চলে যেতেও বাধ্য করা হচ্ছে।
শুধু প্রধান শহরগুলোতেই নয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দখল নিতেও মরিয়া তালেবান। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত যেমন শের খান, ইসলাম ক্বালা ও পাকিস্তান সীমানায় স্পিন বলদাক এখন তালেবানের দখলে। এখন থেকে আসা প্রায় সব রাজস্বই এখন আদায় করছে তালেবান। যদিও যুদ্ধের পরিস্থিতির কারণে এখন আমদানি ও রপ্তানির কাজ অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। তবে এর কোনো কোনো সীমান্ত বন্দর দিয়ে মাসে ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পন্য আনা-নেওয়া হয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণার পর থেকেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। এই সুযোগেই নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে তালেবান। এখন মার্কিন বাহিনী সম্পূর্ণভাবে আফগানিস্তান ত্যাগ করলে কীভাবে আফগান বাহিনী তালেবানের আক্রমণের জবাব দেবে, তাই দেখার বিষয়।