স্বদেশ ডেস্ক:
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’র তৈরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্স’ পরীক্ষা করার জন্য বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাসহ পাঁচজন। আজ রোববার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে।
হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’র মিডিয়া কনসালটেন্ট ও গ্লোবাল টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, ক্যামেরা পারসন ফাহাদ আল কাদরিসহ তাদের দুই গাড়ি চালক।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, সরকারি অনুমতি নিয়ে বানর ধরতে যান তারা। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকা থেকে ১০টি বানর ধরেও ফেলেন। এ সময় স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন বানরের জন্য টাকা দাবি করে। দাবি না মানায় তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা ও বানরগুলোও নিয়ে যায়। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে বলে দাবি করে আনিসুর বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বরমী এলাকার স্থানীয় জনগণ বানর ধরার খবরটি আমাকে জানায়। পরে আমি সেখানে গিয়ে কয়েকটি বানর খাঁচায় আবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই এবং এসব বানর ধরার কারণ জানতে চাই। পরে তারা গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তৈরি করা করোনার ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানব দেহে পুশ করার আগে প্রাণীর দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বানর ধরার কথা জানান। বানর ধরার জন্য বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকার কথাও জানান। কিন্তু স্থানীয়রা বানর ধরতে বারণ করার পরও তারা বানর ধরা অব্যাহত রাখায় উত্তেজনা দেখা দেয়। তাদের শান্ত করে বানর ধরতে আসা লোকজনদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানা পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসেন।’ তবে বানরের জন্য টাকা দাবি ও লুটের কথা অস্বীকার করেছেন আবুল হাশেম।
হাশেম আরও বলেন, ‘কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বরমীর বানর। শত অত্যাচার করে এ বানরগুলো তারপরও তাদের অত্যাচার সহ্য করেও আমরা তাদের খাবার দেই, যত্ন করি। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও প্রত্যেক বাড়ি থেকে খাবার যোগাড় করে দেই। বানরগুলোই বরমী বাজারকে মাতিয়ে রেখেছে। বানরগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে অজ্ঞান করায় তারা উত্তেজিত ও মারমুখী হয়ে উঠেছিল।’
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারি বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানান, গ্লোব বায়েটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিস্কৃত কোভিড-১৯ টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানব দেহে প্রয়োগের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য গত ২৬ জুন গ্লোব বায়েটেক লিমিটেড চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে তাদের ৫৬টি বানরের প্রয়োজন বলে আবেদন করেন। পরদিন প্রধান বনসংরক্ষক বরাবর প্রয়োজনীয় সংরক্ষক বানর ধরা ও ব্যবহারের জন্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক পত্র পাঠানো হয়। পরে প্রধান সংরক্ষক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমাকেও দিয়েছেন। এর আগে তারা গিনিপিগ ও খরগোশেও এ টিকা প্রয়োগ করেছেন। তবে আরও নিশ্চিত হতে বানরের দেহেও প্রয়োগ করার জন্য তাদের বানর প্রয়োজন। তারা গত ২৯ জুন থেকে তিনদিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছেন। বাকি বানর ধরার জন্য রোববার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বনকর্মকর্তাদের অবগত না করেই তারা শ্রীপুরের বরমী বাজারে গেলে জনরোষে পড়েন। পরে স্থানীয় শ্রীপুর উপজেলা ও থানার ওসি তাদের উদ্ধার করলেও বানর ধরে নিয়ে যেতে পারেননি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে গ্লোবের ওই পাঁচ সদস্যকে উদ্ধার করে তিনি থানায় নিয়ে যান। পরে বানর ধরার জন্য তাদের সঙ্গে থাকা মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র তথা কাগজপত্র যাচাই বাছাই ও বন বিভাগসহ তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।