রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ অপরাহ্ন

টিকা আনার সব চূড়ান্ত, অপেক্ষা পৌঁছানোর

টিকা আনার সব চূড়ান্ত, অপেক্ষা পৌঁছানোর

স্বদেশ ডেস্ক:

টিকা সংকটে থমকে আছে দেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম। ফলে বিভিন্ন উৎস থেকে করোনার টিকা সংগ্রহের ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে সরকার। জরুরি ভিত্তিতে টিকা পেতে বাংলাদেশ যোগাযোগ করে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। যদিও মাঝখানে সব কিছু চূড়ান্তের পরও দাম প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় চীনা টিকা প্রাপ্তি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছিল। তবে সব টানাপড়েন কাটিয়ে পূর্ব আলোচনা অনুযায়ীই চীন টিকা দেবে বলে নিশ্চিত করেছে কূটনৈতিক সূত্র। এ ছাড়া রাশিয়া থেকেও টিকা পেতে চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, প্রাপ্তি সহজ করতে চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির টিকা দেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বাংলাদেশে এর পরিবেশক হিসেবে কাজ করবে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে এখন এ টিকা আসার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে টিকা আসা শুরু হবে। প্রথম দফায় সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ উপহারের পর এবার আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেবে চীন। আগামী ১৩ জুন এ টিকা বাংলাদেশে আসবে। আর চীন থেকে কেনা টিকা আসবে এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথমার্ধে।

এর আগে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ কম দামে বাংলাদেশকে দেড় কোটি ডোজ টিকা দিতে সম্মত হয় চীন। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা বা সিদ্ধান্তে সিনোফার্ম তিন মাসে ৩ দফায় ওই টিকা সরবরাহে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছিল। শর্ত ছিল দামের বিষয়টি গোপন রাখার। দুই দেশের মধ্যে গোপনীয়তা রক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি বা নন-ডিসক্লোজারও সই হয়। কিন্তু সম্প্রতি দাম প্রকাশ হয়ে পড়ায় অনিশ্চিয়তা তৈরি হলে ক্ষুব্ধ চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চিঠি দেয়। ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশও পাল্টা চিঠি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। ফলে আপাতত টানাপড়েনের অবসান হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী ১০ ডলারেই চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। তবে পরে ওই দামে টিকা পাওয়া যাবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশ চীন থেকে টিকার পাশাপাশি দেশেও উৎপাদনের চুক্তিতে যাচ্ছে। দেশীয় কোনো কোম্পানি সিনোফার্মের টিকা উৎপাদন করবে। কোন কোম্পানিকে টিকা উৎপাদনের দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটি ঠিক করবে সিনোফার্ম।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘চীনের সঙ্গে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। আমরা বলেছি, টিকা কিনতে চাই এবং তোমরা কোনো বাধা ছাড়াই জোগান দাও। চীন আমাদের বলেছে, তারা কোনো বাধা ছাড়াই টিকা সরবরাহ করবে।’ চীনের সঙ্গে টিকা উৎপাদন সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারবেন না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ওই দেশ থেকে সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য দল আসবে। তারা এসে সরেজমিন দেখে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। আমার জানামতে, এখনো তেমন কোনো দল আসেনি।’

রাশিয়া থেকেও এক কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। এ মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শেষ করে বাংলাদেশ জুলাই থেকে স্পুটনিক-ভি টিকার প্রথম চালান পেতে আগ্রহী। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব টিকা দেশে আসবে। এ জন্য রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা সিআরডিআইএফ সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। গত ৯ মে ঢাকা-মস্কো চুক্তির খসড়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের ২৯ সুপারিশ পাঠানো হয়। রাশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন সেটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা সিআরডিআইএফ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আইন মন্ত্রণালয়ের ২৯ দফা সুপারিশের বিপরীতে তাদের মতামত দেয়। মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস সেটি গত ১২ মে বাংলাদেশে প্রেরণ করে। গত ২৮ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের চূড়ান্ত মতামত জানায়। চীনের মতো রাশিয়ার টিকাও বাংলাদেশে উৎপাদন হবে বলে জানা গেছে। এ জন্য আলাদা চুক্তিও হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি হবে। তবে কখন হবে না হবে, সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। আমরা লাইন করিয়ে দিয়েছি, বাকিটা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাজ। ক্রয় ও যৌথ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’ অন্যদিকে ঢাকা নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনাতভ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের কাছে করোনা ভাইরাসের টিকা বিক্রির চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে কবে টিকা আসবে সেটি জানাননি তিনি।

এ ছাড়া টিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মজুদ থাকা অতিরিক্তি টিকা পেতে এ চিঠি দেওয়া হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশকে টিকা দিতে সম্মতও হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে এতদিন করোনার মৃত্যু ও শনাক্ত হার কম থাকায় তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় আমরা ছিলাম না। এখন তারা দিতে সম্মত হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আসবে।’ তবে কোন কোম্পানির টিকা আসবে সেটি জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার চীনের সিনোভ্যাক টিকা দেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চীনের এনএমপিএ (ন্যাশনাল মেডিসিন্যাল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ টিকার অনুমোদন দেয়। যা আরও ২২টি দেশে জরুরি ব্যবহারে অনুমোদনপ্রাপ্ত। ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য এ টিকা ব্যবহার উপযোগী। বাংলাদেশ সরকারের ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদান করা হবে। দুই ডোজ সম্পন্ন এ টিকার প্রথম ডোজের ২ বা ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এর সংরক্ষণ তাপমাত্রা ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষের করোনা সংক্রমণ লক্ষণযুক্ত ছিল এমন মানুষদের টিকা দেওয়ার পর তাদের অর্ধেকের বেশিকে সুরক্ষা দেয় সিনোভ্যাক। ভয়াবহভাবে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এমন রোগীদের শতভাগ সুরক্ষা দেয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877