শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

করোনা ওয়ার্ড থেকেই করোনা ছড়ানোর শঙ্কা

করোনা ওয়ার্ড থেকেই করোনা ছড়ানোর শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা শনাক্তের হার। আর তাই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে রোগীর চাপ। চিকিৎসাসেবা দিতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে করোনা ওয়ার্ডগুলোতে আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ‘নেগেটিভ’ কিংবা ‘পজিটিভ’ সবার চিকিৎসা হচ্ছে এক সঙ্গেই। এতে করোনা ওয়ার্ড থেকেই উল্টো সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আক্রান্ত কিংবা ‘সাসপেক্টেড’ সবার চিকিৎসা একই ওয়ার্ডে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, রোগীর স্বজন এবং দর্শনার্থীরাও চলাচল করছে অবাধেই। এতে করোনা ওয়ার্ড থেকেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন খোদ রোগীর স্বজনরা। সেখানে মজিবুর রহমান নামে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রথম দফায় তার রোগীর করোনা পজিটিভ আসে। দ্বিতীয় দফায় কয়েক দিন হলো নেগেটিভ এসেছে। এতেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না স্বজনরা। কেননা করোনায় আক্রান্ত ও নেগেটিভ ফল আসা রোগীরা একই ওয়ার্ডে পাশাপাশি থাকছে।

করোনা ওয়ার্ডে নার্সরা সার্বক্ষণিকই থাকছেন। কিন্তু চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া ভার। আব্দুর রহিম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘সব মিলিয়ে চিকিৎসা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। তবে চিকিৎসক কম আসছেন করোনা ওয়ার্ডে। ফলে নার্সরাই সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছেন আক্রান্ত রোগীদের। কোনো সমস্যা হলে নার্স অথবা স্বজন গিয়ে চিকিৎসককে জানাচ্ছেন। এতে করে সঠিক তথ্য পৌঁছাচ্ছে না চিকিৎসকের কাছে।’

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে চিকিৎসকরাই রোগীদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের পাশে সার্বক্ষণিক বসে থাকছেন নার্সরা। দায়িত্বরত এক চিকিৎসক আমাদের সময়কে বলেন, ‘পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। দুই-একদিন পর পরই ওয়ার্ড বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। সেটাও পরিপূর্ণ হতে সময় লাগছে না। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামেকের করোনা চিকিৎসায় সিনিয়র ২০ জনসহ মোট ৬০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে যোগ দিয়েছেন আরও ১১ চিকিৎসক। এ ছাড়াও মেডিক্যাল কলেজের কোর্স শিক্ষকরাও যুক্ত হচ্ছেন করোনা চিকিৎসায়। করোনার নির্ধারিত আটটি ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ২৩২টি। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এসব ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিলেন ২২৪ জন। বর্তমানে ১৬ রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া গত শুক্রবার রাজশাহীতে ২৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩১ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। করোনা শনাক্তের হার ৫১ শতাংশ।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন ছিলেন কোভিড রোগী এবং বাকিরা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে করোনার ‘হটস্পট’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচজন ও রাজশাহীর তিনজন রয়েছেন। এ নিয়ে গত ২৪ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মারা গেলেন ১০১ জন।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর চাপ কমাতে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, অবস্থা খুব বেশি খারাপ কেবল তাদেরই এখন হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। অল্প সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, ‘রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক-নার্সরা বেশ হিমশিম খাচ্ছেন। আমরা রোগীর সেবা দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। চিকিৎসা না নিয়ে কাউকে যাতে ফেরত যেতে না হয় সে জন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডটি করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এই ওয়ার্ডে নতুন করে মোট ৩২টি শয্যা ও ২৮টিতে অক্সিজেনের সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। রবিবারের (আজ) মধ্যে এখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে ও বারান্দার অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি করোনা ওয়ার্ডগুলোতে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ অক্সিজেন সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877