স্বদেশ ডেস্ক: সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে প্রথম পা ফেললেন। পায়ের তলায় গোড়ালির দিকে খচ করে উঠল। শুরু হলো ব্যথা। বিষণ্নবদনে কিছুক্ষণ খুঁড়িয়ে হাঁটলেন। ব্যথা কিছুটা কমে গেল। অনেকক্ষণ চেয়ারে, সোফায় বা গাড়ির সিটে বসে দাঁড়াতে বা হাঁটতে গেলে পায়ের তলায় কাঁটার মতো ব্যথা লাগল। একটু হাঁটার পর ব্যথা কমে গেল কিন্তু চলে গেল না।
এ ধরনের হিল পেইন বা গোড়ালির ব্যথার প্রধান কারণ প্লান্টার ফাশাইটিস। প্লান্টার ফাশা নামক পায়ের তলার ভেতরের দিকের একটি বিশেষ পর্দার প্রদাহ এ ধরনের ব্যথার জন্য দায়ী। এ রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়, দীর্ঘদিন ভোগায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রদাহের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের বাত বা ওই ধরনের বাতরোগের সঙ্গে এ রোগ সংশ্লিষ্ট থাকে।
যারা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন বা হাঁটেন, যেমন-হোটেলবয়, ট্রাফিক পুলিশ অথবা যারা প্রচুর দৌড়ান, যেমন-ম্যারাথন দৌড়বিদ, তাদের এ রোগ বেশি হয়। পায়ের তলার গঠন প্রকৃতির কারণে বা পায়ের তলার মাংসপেশি দুর্বল হলে এ পর্দার প্রদাহ হতে পারে। আরও কয়েকটি রোগের সঙ্গে এ রোগের সম্পর্ক থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই পর্দার কাছে একটি নার্ভব্লক হলে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
অন্য কোনো রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে কিনা, তা জানতে দুয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণ এক্স-রে করলে ব্যথার স্থানে একটি হাড় বেড়ে যাওয়া অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এটার নাম ক্যালকেনিয়ান স্পার। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ হাড় বাড়ার কারণে প্রদাহ হয় না। ব্যথা হয় প্রদাহের জন্য। বেশিরভাগ রোগীরই এ ধরনের কোনো স্পার থাকে না। তবে যাদের এ হাড় খাড়া নিচের দিকে বেড়ে যায়, তাদের ব্যথা ও প্রদাহ দুটোই হাড়ের কারণে হতে পারে।
এ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে-ব্যথা ও প্রদাহনাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। বিশেষ ধরনের নরম নিচু হিল জুতো পরতে হবে, যাতে ব্যথার স্থানে কোনো চাপ না পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ ধরনের জুতা অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। খালি পায়ে হাঁটা উচিত নয়। এমনকি ঘরেও জুতা পরে হাঁটতে হবে। গরম পানিতে পা ডুবিয়ে পায়ের মাংসপেশির নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে।
আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি বা শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফ্যারাডিক ফুট বাত-বিশেষ ধরনের ফিজিওথেরাপি, যা বিশেষ ক্ষেত্রে রোগ সারাতে সাহায্য করে। ব্যথার স্থানে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঋধঃ ঢ়ধফ ধঃৎড়ঢ়যু হতে পারে। উপর্যুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে নব্বই শতাংশ বা তার বেশি রোগী ভালো হয়ে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে শুধু জুতার পরিবর্তন করলেই রোগী ভালো হয়ে যায়। অতি অল্পসংখ্যক রোগী, যারা দীর্ঘদিন রক্ষণশীল চিকিৎসা নেওয়ার পরও ভালো হন না, তাদের অপারেশেনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা নিলে রোগ থেকে মুক্তি মেলে।