স্বদেশ ডেস্ক:
হেফাজতের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হককে জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হেফাজত নেতা মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক (২৮)। মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
আবু বকর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন ছিওড়া ইউনিয়মের ফুলগ্রামের মাওলানা আবদুল কাইয়ূমের ছেলে। তিনি সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি উত্তরপাড়ার চিশতীয়া বেকারির সামনের বায়তুল নাজাত জামে মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাশাপাশি হরতালে তাণ্ডব পরিচালনাকারী ও নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করেছে পিবিআই।
পিবিআই সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবীরের আদালতে জবানবন্দি দেন আবু বকর। এতে তিনি মহাসড়কে হেফাজতের তাণ্ডব ও সহিংসতা সৃষ্টির নেপথ্যে মামুনুল হকের ভূমিকার কথা স্বীকার করেন। এছাড়াও হেফাতের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান পাটোয়ারির সম্পৃক্ততার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মাহমুদুল হাসান হরতাল সফল করার উদ্দেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তার নেতৃত্বে অবস্থান করে জ্বালাও-পোড়াওসহ গাড়ি ভাঙচুরের দায়িত্ব দেয়।
পিবিআই নারায়ণগঞ্জ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ২৮ মার্চ দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এজাহারনামীয় ২৮ জন আসামিসহ অজ্ঞাত ৪০০/৫০০ জন বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও হেফাজত কর্মীসহ আরও অনেক উচ্ছৃঙ্খল হামলাকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডের চৌরঙ্গী পেট্রোল পাম্প হতে মৌচাক পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতিসাধনের উদ্দেশে আঘাত, বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচূর করে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা (নং- ৩০, ২৯-০৩-২০২১) করা হয়৷ গত ১৫ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ। পরে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম পুলিশ পরিদর্শক আরিফুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি।
পিবিআই আরও জানায়, পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলামের দিক নির্দেশনায় তদন্তকারী কর্মকতা মামলাটি প্রকাশ্য ও গোপনে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মহাসড়কে তাণ্ডব পরিচালনাকারী আবু বক্কর সিদ্দিককে ৪ মে মিজমিজি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে ওই আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে আসামি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে হরতালে তাণ্ডব পরিচালনাকারী মূলহোতা হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম প্রকাশ করেছেন বলেও জানায় পিবিআই।
পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আবু বকর সিদ্দিক মসজিদে ইমামতির আড়ালে হেফাজতের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। হরতালের দিন তিনি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মহাসড়কে কর্মী সমর্থকদের জড়ো করেন এবং তাণ্ডবের ঘটনায় সরাসরি লিপ্ত ছিলেন। ওইদিনের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আবু বকর আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছেন। যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া সহিংসতা সৃষ্টির ঘটনায় সম্পৃক্ত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।