স্বদেশ ডেস্ক:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনে আরও শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় বসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ‘বাংলার মেয়ে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে টানা তিনবার জয় পেল দলটি। দিদি, যদিও নিজ আসনে তিনি হেরে গেছেন ‘ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে’, বুধবার শপথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন। কিন্তু সাদাসিধে কাপড়ের (সাদা মনের কিনা, সে ভিন্ন প্রশ্ন) এই নেতাকে হারানোর জন্য রাজ্য বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছিল স্বয়ং কেন্দ্রীয় শক্তি- ভারতীয় জনতা পার্টির সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কিন্তু তাদের সব প্রভাব, প্রচেষ্টা, প্রচার ও অপপ্রচার, তিরস্কার ও তির্যক কথা- কিছুতেই ‘খেলা খতম’ হলো না। বরং খেলা হলো। মমতা জিতলেন এবং সগৌরবে সরকারে ফিরছেন ফের। ২০১১ সালে ১৮৪, ২০১৬ সালে ২১১ আর এবার সম্ভাব্য ২১৩ আসনে জয় নিয়ে সরকার গঠন করবেন তিনি।
যদিও পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করতে পারছে না বিজেপি, কিন্তু এটা বিজেপির বিপর্যয় নয় মোটেও। বরং উত্থান। কারণ শূন্য থেকে ষোলোয় তিন আসন পেয়েছিল যে দল, এবার তারা বাংলায় জয় তুলে নিল ৭৭ আসনে।
হ্যাঁ, দলগত উত্থান বটে (মোদি নিজেও সামাজিক মাধ্যমে এ রকমটা বলেছেন), কিন্তু এ পরাজয় আসলে মোদি-প্রভাবের পরাজয়। মোদি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই হারলেন না। এ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এমন একটা হাওয়ার সুর শোনা যাচ্ছে, সেটাকে ভাষায় লিখলে দাঁড়ায়, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বে থাকা বিজেপি হেরে যাবে। মানে, মমতার কাছে হারের মধ্য দিয়ে মোদির ভারত হাতছাড়া হওয়ার দিন শুরু হলো বলে। এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো এই যে, মমতাকেই জোটনেতা এবং ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ ভেবে নিয়েই পরবর্তীয় লোকসভা নির্বাচনে মোদিবিরোধী মহাজোটের ‘ক্রিয়া’ শুরু হলো ভারতজুড়ে।
বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকার একাধিক প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যমে মমতাকে জানানো ভারতীয় নেতাদের শুভেচ্ছাবার্তায় এমন চিত্রই ফুটে উঠছে।
বিবিসির সৌতিক বিশ্বাসকে তৃণমূলের মুখ্য রাজনৈতিক পরামর্শক প্রশান্ত কুমার মার্চে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের লড়াই ঠিক রাজ্যলড়াই নয়, এটা আসলে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের লড়াই’। বিশ্বাস গতকাল তার প্রতিবেদনে বলেছেন, এই লড়াইয়ে মোদি একটা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে হারলেন।
না, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির না-জয় মানেই ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলটির জয়ের সম্ভাবনা শূন্য হয়ে গেল। কিন্তু কুমার বিষয়টাকে উল্টোভাবে দেখেছেন এবং সে কারণেই মমতার এই তৃতীয় জয়কে ভারতপটে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তার মতে, রাজ্যে এবার তৃণমূল হেরে গেলে চব্বিশের নির্বাচনে বিজেপিবিরোধী মহাজোটের জয়ের সম্ভাবনা ‘বস্তুত শূন্য’ হয়ে যেত।
প্রশান্ত কুমারের মনে হয়েছে, মমতা হেরে গেলে ‘বিজেপি নামের হিন্দুত্ববাদী দল’টি সারাদেশেই আরও বেশি প্রভাব তৈরি করত। বামেরা চুপসে যেত, উদারবাদীরা চুপ মেরে যেত।
গুজরাট মডেলে ‘ঘৃণার রাজনীতি’ করার জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে সংস্কারবাদী ও উদারপন্থিদের নানা অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গেও সে চেষ্টা করেছিল দলটি। বিশেষ করে ‘অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেওয়া’র হুমকি দিয়ে এবং ধর্মীয় বিভাজনকে পুঁজি করে বিদ্বেষের যে বিষবাষ্প ছড়িয়েছে ‘বাংলার আকাশে’, সেই ক্ষতই সারতে সময় লাগবে বেশ। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতার জয় বা মোদির হার একটা ‘আশীর্বাদই বটে’।