স্বদেশ ডেস্ক:
সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যাতে দেখা যায় কোনো এক মাদরাসায় সেখানকার এক শিক্ষক তার এক ছাত্রকে বেপরোয়ারভাবে পেটাচ্ছেন। শিশু ছাত্রটিও চিৎকার করে যাচ্ছে তাকে মাফ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো রা নেই সেই শিক্ষকের। পিটিয়েই যাচ্ছেন!
ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মারকাযুল কুরআন ইসলামিক একাডেমিতে। প্রতিষ্ঠানের হেফজ বিভাগে শিক্ষকের নির্মম মারধরের শিকার ছাত্রের নাম ইয়াসিন ফরহাদ। গত সোমবার তার উপর চালানো হয় এ নির্যাতন। শিশুটির বিরুদ্ধে শিক্ষকের অভিযোগ, মা-বাবা দেখা করতে আসার পর তাদের সঙ্গে বাড়ি যেতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানের গেট থেকে বের হয়ে গিয়েছিল ইয়াসিন।
ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সর্বত্র। মঙ্গলবার থেকে হাজার হাজার মানুষ ওই ভিডিও শেয়ার করেন। পরে রাত ১টার দিকে হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামের মারকাজুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে অভিযান চালায় পুলিশ। আটক হন শিশু ছাত্রকে নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ মো. ইয়াহইয়া।
যদিও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে ইয়াসিনের বাবা-মা। একটি চিঠির মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য দিয়ে ইয়াহিয়াকে ক্ষমা করায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি প্রশাসন।
জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে ইয়াসিনকে দেখতে তার মা পারভিন আক্তার ও বাবা মোহাম্মদ জয়নাল মাদরাসায় মারকাজুল কোরান ইসলামি একাডেমিতে আসেন। ফেরার সময় ইয়াসিন তাদের সঙ্গে বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরে। এক পর্যায়ে সে মা-বাবার পিছু পিছু মাদরাসার মূল ফটকের বাইরে চলে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হন ইয়াহিয়া। ইয়াসিন কেন মূল ফটকের বাইরে গেল, সে জন্য তাকে ঘাড় ধরে মাদরাসার একটি কক্ষে নিয়ে আসেন ইয়াহিয়া। এরপর বেত দিয়ে অনবরত মারতে শুরু করেন।
৩৩ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়াসিনকে পিটিয়েই যাচ্ছেন ইয়াহিয়া। ছোট্ট ইয়াসিন এ সময় চিৎকার করে কাঁদছিল। বারবার মাফ চাইলেও মন গলেনি ইয়াহিয়ার।
বিষয়টি অবহিত হয়ে ওই মাদ্রাসায় রাত ১টার দিকে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান চালায় হাটহাজারী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন। এ সময় মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক ইয়াহিয়াকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। ইউএনও বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ওই মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থী ইয়াসিন ফরহাদকে উদ্ধার করি এবং অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে পুলিশি হেফাজতে নিই। এ সময় ইয়াসিন ফরহদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত হই। ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব; ঠিক এ সময় ইয়াসিনের বাবা-মা বাবা-মা এসে কান্নাকাটি শুরু করেন। তারা শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান।
ইউএনও রুহুল আমীন আরও বলেন, ‘তাদের অনেক বোঝানো সত্ত্বেও তারা লিখিতভাবে আমাদের অনুরোধ করেন আইনিব্যবস্থা না নিতে। রাত ২টা পর্যন্ত অভিভাবকরা আমার কার্যালয়ে অবস্থান করেন যেন আমি আইনি ব্যবস্থা না নিই।’