শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

নৌকায় ভোট দেওয়ায় ১০ কর্মচারীকে ছাঁটাই!

নৌকায় ভোট দেওয়ায় ১০ কর্মচারীকে ছাঁটাই!

স্বদেশ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের ১ দিনের মাথায় ১০ জন কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাতে কাউসার আলী রয়েল নামের পরিষদের এক কর্মচারী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। এ নিয়ে পরিষদের সাবেক ও বর্তমান মেয়রসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে তানোর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

থানার অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রকাশনগর গ্রামের বাসিন্দা আবু বাক্কারের ছেলে কাউসার আলী রয়েল (৩০) প্রায় ১০ বছর ধরে পৌরসভায় রোডলাইট ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।  ওই চাকরির জন্য মেয়র গোলাম রাব্বানীকে বিভিন্ন সময়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। এত টাকা জোগাড় করতে তাকে ভিটেমাটি ও এমনকি গোরস্থানের জায়গাও বিক্রি করতে হয়। এভাবে টাকা নিয়ে হয়রানি হলে ২০১৮ সালের দিকে মৌখিকভাবে তাকে নিয়োগ দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া হয়।

পরে রয়েলকে নিয়মিত অফিস ও তার কাজকর্ম করিয়ে নেন মেয়র রাব্বানী। কিন্তু বেতন ভাতা নিয়মিত দেওয়া হয়নি। এরপরও রয়েল তার চাকরি স্থায়ীকরণের আশায় নিয়মিত ডিউটি করেন। সম্প্রতি ৩০ জানুয়ারি পৌর পরিষদ নির্বাচনের আগে নিয়োগ পরীক্ষার নামে আবারও ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

পরে তাকে চাপ দিয়ে বলা হয়, তার আস্থাভাজন জগ প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আর তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

রয়েল, দুরুল হুদা, জাকারিয়া মাহমুদ উজ্জলসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০ ভুক্তভোগী বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি নৌকাপ্রার্থী আমির হোসেন আমিরের পক্ষে তারা পৌরসভার ১০ জন কাজ করেন। এতে বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সম্প্রতি সাইদুর রহমান নির্বাচিত হয়ে তাদের পরিষদে আসতে নিষেধ করেন।

এদিকে, ক্ষোভে ও অভিমানে অভুক্ত অবস্থায় আত্মহননের জন্য বিষপান করেন রয়েল। আজ শনিবার রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানান রয়েলের বাবা আবু বাক্কার।

আবু বাক্কার বলেন, ‘আমি পাড়ার এক মসজিদে মোয়াজ্জেম হিসেবে কাজ করি। বর্তমানে আমাকেও মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘রয়েল পাড়ার ছেলে বলে তাকে দিয়ে পরিষদের ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করানো হয়। পরে রোডলাইট ইলেকট্রিশিয়ান পদে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে তাকে ৯ হাজার টাকা বেতন ভাতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মেয়র এসে তাকে চাকরিচ্যুত করলে আমার কী করার আছে?’

এ নিয়ে মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, ‘পৌর পরিষদ থেকে কাউসার আলী রয়েল ছাড়াও ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া আছে বলে আমার জানা নেই। তাই রয়েলকে পরিষদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।‘

এ বিষয়ে তানোর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হয়ে গত ৩০ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনে মাত্র ৬১ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আমির হোসেনকে হারিয়ে রাজশাহীর মুন্ডুমালা পৌর মেয়র হয়েছেন সাইদুর রহমান। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এর এক দিন পরই তিনি ১০ কর্মচারীকে ছাটাই করলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877