স্বদেশ ডেস্ক:
সরবরাহ ভালো থাকায় কিছুদিন আগেও বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি মিলেছে ১৩০ টাকায়। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সাপ্তাহিক ছুটি ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামটাও চড়েছে। ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি ও কক মুরগির দামও বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। আর গেল সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। গতকাল থেকে খুচরা পর্যায়ে কিনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর গত সপ্তাহে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা। অপরদিকে সপ্তাহখানেক আগে ২০০ টাকায় পাওয়া গেলেও লাল কক মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি।
কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে মুরগির সরবরাহ অনেক বেশি ছিল। বর্তমানে ব্রয়লারের চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম। তাই দামও বাড়ছে। তিন সপ্তাহের মধ্যেই দুই দফা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শুক্রবার সকাল থেকেই এ বাজারে ব্রয়লারের কেজি সর্বোচ্চ ১৫০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’ মালিবাগ বাজারের মুরগি বিক্রেতা ব্যবসায়ী মো. শাকিল বলেন, ‘করোনায় বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি কম হয়েছে। এখন আবার অনুষ্ঠান বেড়েছে। বিশেষ করে শুক্রবারে অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তাই এদিন মুরগির চাহিদা
অন্য দিনের তুলনায় বেশি থাকে। শুধু ব্রয়লার নয়, অন্যান্য মুরগিরও বিক্রি বেড়েছে।’ শাকিল বলেন, ‘চাহিদা বাড়লেও ব্রয়লারের সরবরাহ তুলনামূলক কম। হঠাৎ কেন কমেছে জানা নেই। তবে সরবরাহ কম হওয়াতেও দাম বাড়তি। মালিবাগ ও খিলগাঁও এলাকার ভেতরের কোনো কোনো দোকানে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকাতেও ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে।’
এদিকে ক্রেতাদের এখনো ভোগাচ্ছে ভোজ্যতেল। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন ও পাম সুপার। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১১৫ ও পাম সুপার তেল ১০৪ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই টাকা বেশি দামে। অর্থাৎ বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১১৭ ও পাম সুপার ১০৫ থেকে ১০৬ টাকা। কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের কাঞ্চনপুর হাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পরও খোলা তেলের দাম এক দফা বেড়েছে। মাঝে দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে আবার তা এক থেকে দুই টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লিটার হিসেবে এর দাম পড়ে ১১৭ টাকা। অপরদিকে পাম সুপার তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা কেজি এবং সাধারণ পাম তেল ১১০ টাকা।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘সরকার কেবল দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, বাজারে তেলের সরবরাহটাও দেখতে হবে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকলে দাম বেঁধে দিলেও কাজ হবে না। আমাদেরই (পাইকার ব্যবসায়ী) মিলগেট থেকে বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে।’ গোলাম মাওলা আরও বলেন, ‘সরকার মিলগেটে খোলা তেলের দাম প্রতি লিটার ১০৭ টাকা নির্ধারণ করলেও আমাদের কিনতে হচ্ছে ১১০ টাকা ৯৭ পয়সায়। অপরদিকে পাম সুপার ৯৭ টাকা ৫৬ পয়সা এবং সাধারণ পাম তেল কিনতে হচ্ছে ৯৪ টাকা ৮৭ পয়সায়। সুতরাং আমাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও আগের মতোই চড়া। বর্তমানে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। ব্র্যান্ড ভেদে পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬১০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। বোতলের গায়েই সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়া রয়েছে ৬৩০ থেকে ৬৫৫ টাকা পর্যন্ত। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী পাঁচ লিটারের বোতল খুচরাতে বিক্রি হওয়ার কথা ৬৩০ টাকায়।
এদিকে বাজারে অনেকদিন হলো স্বস্তি বিরাজ করছে সবজির দামে। শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রাজধানীর বাজারগুলোতে পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি তুলনামূলক কম দামেই কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে গত সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে দামি সবজির তালিকায় এখন রয়েছে পটোল ও ঢেঁড়স। এ দুটি সবজির কেজি কোনো কোনো বাজারে একশ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর শিমের কেজি এখন ২০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস। এ ছাড়া পাকা টমেটো ২০ থেকে ৩০ টাকায়, শশা ২০ থেকে ৩০ টাকা ও গাজর ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজি। পেঁয়াজ, আলুর দামেও কিছুটা স্বস্তি মিলছে। খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, আলু ১৫ টাকায়।
কারওয়ানবাজারের সবাজির পাইকার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী বলরামচন্দ্র বলেন, ‘দেরিতে হলেও বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ অনেক বেড়েছে। তাই দামও নাগালের মধ্যে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় পাইকারি হাটে অনেক কম দামেই সবজি সংগ্রহ করতে পারছি আমরা। তাই রাজধানীতেও দাম কম রয়েছে। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে আরও বেশ কিছু সময় কম দামে সবজি কিনে খেতে পারবেন ক্রেতারা।’