রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

‘থাই মডেলের’ দিকে যাচ্ছে মিয়ানমার?

‘থাই মডেলের’ দিকে যাচ্ছে মিয়ানমার?

স্বদেশ ডেস্ক:

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের গতকাল ১২তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবারও দেশটির কয়েকটি শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে সেনাবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে, সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, আন্দোলনরত জমায়েতের কাছেই বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকে। এর মধ্যে শুধু একদিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওইদিন একজন নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমানে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে রয়েছেন। পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে।

এ ছাড়া বড় ধরনের দমন-পীড়ন বা হাঙ্গামার খবর পাওয়া যায়নি। বরং রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা নাচ-গান করে, ছবি এঁকে অনেকটা উৎসবের আমেজে আন্দোলন করছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী কিছুটা হলেও ‘নমনীয়’ কৌশল নিয়েছে।

নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনা। এর পর থেকে দেশটিতে সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে, নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরদিন থেকেই বিভিন্ন শহরে বাসিন্দারা থালা-বাসন নিয়ে রাস্তায় সেনাবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। প্রথম দিকে বিক্ষোভ বিচ্ছিন্ন থাকলেও পরে তা সংহত রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, কৃষক, শ্রমিক- বলা যায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বা কারফিউ লঙ্ঘন করে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিলেও নিরাপত্তা বাহিনীকে খুব একটা বেশি চড়াও হতে দেখা যায়নি বা শত শত বিক্ষোভকারীকে আটকের খবরও আসছে না। এই জায়গা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমার হয়তো প্রতিবেশী দেশ থ্যাইল্যান্ডকে অনুসরণের পথে হাঁটছে।

থাইল্যান্ডে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে কৌশলে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান প্রায়ুথ চান উচা। এখন তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ের মধ্যে থাইল্যান্ডে নানা পটপরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু প্রায়ুথের ক্ষমতা খর্ব হয়নি- বরং বেড়েছে। ২০১৯ সালে থাই সেনা দেশটিতে নির্বাচনও দিয়েছে- সেই বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন প্রায়ুথ। নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধন করে নিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সেনাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়েছে। এভাবে তিনি থাইল্যান্ডকে কব্জায় এনেছেন। আর নির্বাচিত সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা এখন আছেন নির্বাসনে।

এ বিষয়ে অনুমান কিছুটা জোরালো হয় যখন, প্রায়ুথ চান উচা বলেন যে- মিয়ানামারের সেনাবাহিনী তার কাছ থেকে গণতন্ত্র বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন। প্রায়ুথ বলেন, তার কাছে এক চিঠির মাধ্যমে এ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব হিসেবে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে ‘গণতান্ত্রিক’ প্রক্রিয়াকে তিনি সমর্থন করেন। এ ছাড়া বিশ্বের সব দেশ যখন মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দা করছে, সেই সময় থাইল্যান্ড বলছে- এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যদিও থাইল্যান্ডে এখনো সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু থাই বিক্ষোভকারীদের ওপরও নিরাপত্তা বাহিনীকে অতিমাত্রায় কঠোর হতে দেখা যায়নি।

এখন মিয়ানমারও সেই পথে হাঁটছে কিনা, তা আরও কিছুদিন পর স্পষ্ট হবে। তবে প্রায়ুথ যতটা সহজে থাইল্যান্ডকে করেছে, সেই তুলনায় মিয়ানমারে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের কিছুটা বেগ পেতে হবে। কেননা থাইল্যান্ডে একজন ‘সু চি’ নেই; কিন্তু মিয়ানমারে সেনাশাসন দীর্ঘ করতে হলে সু চিকে মোকাবিলা করতেই হবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন দিলেই সু চির বিকল্প কাউকে পাওয়া যাবে না। আবার সু চির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে (অননুমোদিত ওয়াকিটকি রাখা), তা দিয়ে সু চির রাজনীতি বন্ধ করা কঠিন হবে। আবার এদিকে মিয়ানমারে কঠোর সামরিক জান্তার সময়ে যে প্রজন্ম ছিল শিশু- আজ তারাই তরুণ। তাই এবারের বিক্ষোভে তারা সেনাশাসন রুখতে বদ্ধপরিকর।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877