স্বদেশ ডেস্ক: করোনার বৈশ্বিক ক্রান্তিকালে গতকাল বুধবার ছিল সত্যিই এক ঐতিহাসিক দিন। আর এ ইতিহাসে শুরুতেই নাম লিখিয়ে নিয়েছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। গতকাল বিকেল ৪টায় তার দেহে টিকা প্রদানের মাধ্যমে দেশে শুরু হলো নতুন এক যজ্ঞ। সরকারের দৃঢ়তায় টিকা নিয়ে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনার স্রোত উজিয়েই নিজের চলার পথ করে নিল দেশ। বহুল প্রতীক্ষিত এ কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে করোনা টিকার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এদিন ৪০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড–১৯’র টিকা নেবেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০০ ও বাংলাদেশ–কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। সবগুলো হাসপাতালেই টিকাদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিটি হাসপাতালেই টিকা দেওয়ার বুথ এবং বিশ্রাম শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আছে ওয়েটিং রুমও। আইসিইউ সুবিধা রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা হাসপাতালে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ টিকাদানকেন্দ্রে ১৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনার টিকা নেবেন। এর মধ্যে ২০ জন চিকিৎসক, ২০ জন নার্স আছেন। অন্যরা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী ও স্টাফ। সেখানে চারটি টিকা দেওয়ার বুথের মধ্যে দুটি নারীদের জন্য। বিশেষজ্ঞসহ মোট ২৩ জন চিকিৎসক টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এখানে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা এবং ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
বিএসএমএমইউ কনভেনশন সেন্টারে আটটি বুথে ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। টিকাকেন্দ্রে আছে চারটি হাই-ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), কেবিন ব্লকে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ চার শয্যাটি শয্যা। এ ছাড়া টিকাকেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন দুজন চিকিৎসক, প্রস্তুত রাখা হবে দুটি অ্যাম্বুলেন্স।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথম করোনার টিকা নেবেন। এরপর একে একে হাসপাতালটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনার টিকা দেওয়া হবে।
মুগদা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট নন্দিতা পাল প্রথম টিকা নেবেন। হাসপাতালে বহির্বিভাগের তৃতীয় তলায় করোনার টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দিনে মোট ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা টিকা নেবেন। এর মধ্যে চিকিৎসক পাঁচজন, বাকিরা হাসপাতালের নার্স ও কর্মকর্তা। টিকা সংরক্ষণের জন্য দুটি ঘর আছে। এখানে টিকা দেওয়ার দুটি বুথ, বিশ্রামঘর ও আইসিইউর ব্যবস্থা আছে।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী গতকাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আয়োজিত টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রথম পাঁচজনের শরীরে টিকার প্রয়োগ দেখেন তিনি। এদিন ২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। আজ ঢাকার আরও চারটি হাসপাতালের ৪শ’ থেকে ৫শ’ স্বাস্থ্যকর্মী, সেবিকা ও চিকিৎসককে টিকা দেওয়া হবে। এর পর তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে সপ্তাহখানেক। আর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের জেলায় জেলায় শুরু হবে এ মহাযজ্ঞ।