স্বদেশ ডেস্ক: স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮-এর সংশোধনী প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। জানা গেছে, সংশোধিত নীতিমালার আওতায় দেশে বৈধ উপায়ে অপরিশোধিত বা আকরিক সোনা ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই দিন ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ের ৭টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান নীতিমালায় স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির বিধান থাকলেও অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। সূত্রমতে, এ বিষয়টির উল্লেখ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য। আবেদনে প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করে তা নিজস্ব পরিশোধনাগারে পরিশোধনপূর্বক বিভিন্ন গ্রেডের স্বর্ণবার ও স্বর্ণমুদ্রা তৈরি, বিপণন ও রপ্তানিতে তাদের আগ্রহের বিষয়টিও তুলে ধরেছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
প্রসঙ্গত, আফ্রিকার স্বর্ণখনি-সমৃদ্ধ কয়েকটি দেশ ছাড়াও ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিশ্বের উন্নত কিছু দেশ স্বর্ণ পরিশোধন করে থাকে। এ জন্য প্রয়োজন অত্যুন্নত প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুদক্ষ জনবল। কিন্তু বাংলাদেশে অপরিশোধিত/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ পরিশোধন করার মতো কোনো পরিশোধনাগার এখনো গড়ে ওঠেনি। সংশোধিত নীতিমালায় স্বর্ণ পরিশোধনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিশোধনাগার স্থাপন ও স্বর্ণমানের বিশুদ্ধতার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিদ্যমান স্বর্ণ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির ডিলার অনুমোদনে একটি গাইডলাইন নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণীত এ গাইডলাইনের আলোকে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানিতে স্বর্ণ খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে ‘গোল্ড ডিলার’ হিসেবে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ডিলারের মাধ্যমে দেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি শুরু হয়েছে।
১ হাজার ১৪২ কোটি টাকার ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ের ৭টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ২৩ হাজার ৬৫০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি (এসপিসি পোল) ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো সরবরাহ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুল্স ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি যোগ করেন, বৈঠকে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ডেমরা পুলিশলাইন্স এলাকায় ২০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণের পূর্তকাজের ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি পেয়েছে দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও দ্য অরবিটাল বাংলাদেশ। এতে ব্যয় হবে ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈঠকে শহর এলাকায় ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উন্নত জীবনব্যবস্থা (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা ব্যয় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইএমসি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের পরামর্শক। এতে পরামর্শক ব্যয় বাড়ছে ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-০২-এর পূর্তকাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি করবে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, মেসার্স জন্মভূমি নির্মাণ এবং অহিদুজ্জামান চৌধুরী (এমএনও)। এতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ২২ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈঠকে ‘চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ)-এর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউপি-০১-এর আওতায় চট্টগ্রাম অংশের পূর্তকাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কাজটি করবে তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ২৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে ‘চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ)-এর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউপি-০১-এর আওতায় কুমিল্লা অংশের পূর্তকাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কাজটি করবে যৌথভাবে আবদুল মোনেম লিমিটেড ও স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৫৫৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈঠকে ‘ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ)’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী পরামর্শক সেবা বাবদ ১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে। এ প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে রয়েছে যৌথভাবে জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড ও পাডেকো কোম্পানি লিমিটেড এবং এসএমইসি জেবিএসএল ডিডিসি বিসিএল।