স্বদেশ ডেস্ক: গ্যাসের গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার হিসাব চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গত মঙ্গলবার ক্যাবের আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এক রিট আবেদনের সঙ্গে এই সম্পূরক আবেদন করেন। আগামী মঙ্গলবার শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। তিনটি উপায়ে (সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট, ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এবং এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ডের নামে) পেট্রোবাংলা ওই অর্থ আদায় করেছে।
সম্পূরক আবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চে শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। পেট্রোবাংলার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আবেদনে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে নেওয়া এ অর্থের হিসাব দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ও এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ডের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের ব্যাপারে মাসিক আয় ও ব্যয়ের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের প্রতি আদেশ চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাপারে দুদক দুর্নীতির যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ জানাতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের প্রতি আদেশ চাওয়া হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, এনার্জি সেক্টরে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর গ্যাস সরবরাহের খরচ বাড়ছে। গ্যাস চুরি বন্ধ হলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হতো না।
ক্যাবের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আমাদের সময়কে বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে গ্যাস কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য ফুয়েলের ঘাটতি ও এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকির নামে গ্যাসের দাম বাড়াছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে-যে ঘাটতি তারা দেখাচ্ছে, তার একটি যৌক্তিক সমন্বয় করা হোক। গ্যাস ডেভেলপমেন্ড ফান্ড ও এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ডের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পেট্রোবাংলা নিয়েছে। এ দুটো ফান্ড বিলুপ্ত ঘোষণা করে গ্যাসের দামের সঙ্গে সমন্বয় করার দাবি ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।
তিনি বলেন, আড়াই-তিন বছরে যদি হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা হয়, তা হলে ১৯৯৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তারা কত হাজার কোটি টাকা আহরণ করেছে গ্রাহকদের কাছ থেকে? আবার ২০১৭-১৮ অর্থবছর অবধি গ্যাস উন্নয়ন তহবিল বাবদ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আবার জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের নামে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এসব টাকা যৌক্তিক সমন্বয় করলে গ্যাসের দামের যে ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে তা থাকবে না। গ্যাসের দামও বাড়ানো লাগবে না।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে ক্যাব। তাদের আবেদনে বলা হয়, বিইআরসি গত বছরের ১৬ অক্টোবর গ্যাসের সঞ্চালন ও বিতরণ ফি বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছিল। এ আদেশের বিরুদ্ধে রিট করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১ জুলাই আবারও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।