স্বদেশ ডেস্ক: রবিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী থানা এলাকা থেকে পুলিশ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা একটি অত্যাধুনিক একে ২২ অটোমেটিক রাইফেল উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় ৩০ রাউন্ড গুলি এবং ২টি ম্যাগাজিন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা অস্ত্র চোরাকারবারিদের একটি গ্রুপ কুমিল্লার আরেকটি গ্রুপের কাছে এ অস্ত্র-গুলি সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য আনে। কিন্তু হাতবদলের আগেই তা জব্দ করে কাউন্টার টেররিজম বিভাগের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সদস্যরা। গ্রেপ্তার করা হয় দুই আসামিকে। অন্যরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওয়ারী থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
রাজধানীতে হঠাৎ ভারী অস্ত্রের চালান আটকের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে। তারা বলছেন, রাজধানীতে সচরাচর ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র তথা পিস্তল, রিভলবার উদ্ধার হয়। অনেক দিন পর উদ্ধার হলো একে ২২ রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্র। রাজধানী ও ঢাকার বাইরে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনার জন্যই এ অস্ত্রের চালান ঢাকায় আনা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
সর্বশেষ একে ২২ রাইফেল ঢাকায় উদ্ধার হয় ২০১৬ সালে নব্যধারার জঙ্গিদের কাছ থেকে। বেশ কয়েক বছর পর সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হলো বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইতোমধ্যে উদ্ধার করা এই অস্ত্র গুলির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কানেকশন খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। নাম বেরিয়ে এসেছে জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতার।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি টিম ওই একে ২২ রাইফেল ও গুলির চালান উদ্ধারে অভিযান চালায়। সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম থেকে আনে অস্ত্র চোরাকারবারি গ্রুপের সদস্য বাবুলউদ্দিন ও সাদেক আহমেদ। আর কুমিল্লা থেকে তা কিনতে আসে মো. কামাল হোসেন, মো. সাইদুল ইসলাম মজুমদার, মো. হাসিব ও গোলাম কিবরিয়া।
রবিবার রাতে ওয়ারী থানার রাজধানী সুপার মার্কেট এলাকায় এই অস্ত্র হাতবদলের সময় অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা থেকে আসা মো. কামাল হোসেন ও মো. সাইদুল ইসলাম মজুমদারকে। পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে ১টি একে ২২ রাইফেল, ৩০ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগাজিন। উদ্ধার করা একে ২২ অস্ত্রটি সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি। ওজন প্রায় সাড়ে চার কেজি।
পরে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা পুলিশকে বলেছে, কুমিল্লার এক জামায়াত নেতা ওই অস্ত্র কিনতে অর্থায়ন করেছেন। এর আগেও চট্টগ্রামের একই গ্রুপের কাছ থেকে তারা আরও ২টি একে ২২ রাইফেল সংগ্রহ করে। বড় ধরনের নাশকতার জন্যই এ ধরনের ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার ডিআইজি মনিরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন জামায়াত নেতার মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতে বড় ধরনের নাশকতার জন্য এ ধরনের ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করা হতে পারে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত ও অনুসন্ধান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের অস্ত্র এর আগে জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন আর এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে না। উদ্ধার করা অস্ত্রটি অটোমেটিক রাইফেল। অর্থাৎ এটি সিঙ্গেল ফায়ার করা যায়। সেমি অটো করা যায়। আবার ব্রাশফায়ারেও কাজে লাগানো যায়। এর আগে জঙ্গিদের কাছ থেকে যেসব একে ২২ রাইফেল উদ্ধার হয়েছিল তা অটোমেটিক রাইফেল ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া একই মডেলের রাইফেল ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে তামিম আহমেদ চৌধুরীর জঙ্গি আস্তানা, বগুড়ার একটি আস্তানা এবং রংপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে সেগুলো অটোমেটিক ছিল না।