শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

ঘাতক নয়ন রিফাত রিশান কোথায়

ঘাতক নয়ন রিফাত রিশান কোথায়

স্বদেশ ডেস্ক: বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী নেওয়াজ রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকা-ের চার দিন পেরিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত দুজনসহ ৩ জন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে চিরুনি তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর সদস্যদের প্রতিটি সীমান্তে সতর্ক অবস্থা জারি রাখা হয়েছে। সবকটি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারের ডেস্কে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের ছবি। সীমান্তবর্তী ইমেগ্রেশন চেকপোস্টগগুলোয় দায়িত্বরতদের ডেস্কেও এজাহারভুক্ত ১২ আসামিসহ সন্দেহভাজনদের ছবি টাঙানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- সংঘটনের অন্যতম ৩ খুনি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীকে। অধরাই রয়ে গেছে এজাহারভুক্ত আসামি রাব্বি আকন, সিফাত, রায়হান, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের সোনালী পাড়া এলাকার রিফাত ও একই এলাকার অলি এবং টিকটক হৃদয়সহ অচেনা আরও ৫-৬ জন আসামি।

এতকিছুর পরও তারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে-খুনিরা এখন কোথায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রমতে, প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ও রিশান ফরাজীকে তাদের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে। তবে এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নৃশংস খুনিরা ৪ দিনেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিদের পরিবার হতাশা ব্যক্ত করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রিফাত শরীফের খুনিদের গ্রেপ্তার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা করেছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর নাজমুল হাসান এবং সন্দেহভাজন নাজমুল আহসানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার রাতে পটুয়াখালী শহরের গালর্স স্কুল এলাকা থেকে আটক করা হয় রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি রাব্বি আকনের বন্ধু সাইমুনকেও (২২)।

আটক সাইমুন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি মান্নানের ছোট মেয়ে মিথিলা ফারজানার স্বামী। বছর কয়েক আগে রাব্বির ন্যাশনাল আইডি কার্ড ব্যবহার করে সাইমুনের স্ত্রী মিথিলার একটি সিম কেনা হয়। সেই সিম ব্যবহার করায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে। পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের হেফাজত থেকে তাকে গতকাল শনিবার বরগুনা থানায় নেওয়া হয়।

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাইমুন বরগুনা শহরের স্টেডিয়াম এলাকার কাওছার হোসেনের ছেলে। তিনি নয়ন বন্ড বাহিনীর সঙ্গে চলাফেরা করতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তিনি মামলার এজাহারভুক্ত নন। তাকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার সাইমুন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, খুনিদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব আছে। তবে তাদের পাপের ভাগ আমি নেব কেন? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনিও। এদিকে আসামিদের দুদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন। গতকাল নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।

এসপি বলেন, আমরা বসে নেই, জালের ফাঁস ছোট হয়ে আসছে। আসামিদের পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে আরও দুদিন সময় লাগতে পারে। আমি আবারও বলছি, সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

বরগুনা সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ৩ জনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অভিযান চলছে।

অভিভাবকদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে সম্ভাব্য স্থান ও তাদের বন্ধুবান্ধবদের খোঁজখবর নিচ্ছি, আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারব। ‘বাবা মারা গেলে ছেলে এতিম হয়, আমি এতিম হয়ে গেছি। আমার একমাত্র ছেলেকে কীভাবে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা বিশ্ববাসী দেখেছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই,’ বলেন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ।

গতকাল শনিবার বরগুনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরে মানববন্ধন শেষে বরগুনা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে নানা শ্রেণি-পেশার তিন সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়।

এ সময় রিফাত হত্যাকরীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেন, অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে বরগুনাকে অচল করে দেওয়া হবে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবে গত বছর ২৮ এপ্রিল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ।

এই সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ দেশের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও নয়নের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার খবর আমরা পাইনি; বরং একাধিক মামলা ও ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনের পরও নয়ন বরগুনায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা থেকে জানান, বরগুনায় রিফাত শরীফকে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের আটক করে বিচারের মাধ্যমে

সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ ও নাগরিক কমিটি পৃথক ব্যানারে এ মাবনবন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, রিফাত খুনের ঘটনায় ফরিদপুরের প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার সকালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। রিফাতের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এনজিও, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তরুণ সংগঠন ফরিদপুর ডিবেট ফোরাম, উদ্যম, রেডিও ফরিদপুর, উদ্দীপ্ত তারুণ্য, উই কেয়ার, প্রতিজনের যৌথ আহ্বানে আয়োজনে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877