স্বদেশ ডেস্ক:
সবুজ ঢাকা তৈরির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ‘জল সবুজে ঢাকা’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটির আওতায় ছিল বিভিন্ন এলাকায় ১৮টি পার্ক ও ১১টি খেলার মাঠ উন্নয়ন। সেগুলোর কাজ শুরু হয় ওই বছরের জুন-জুলাইয়ে। অথচ তিন বছরেও সেই কাজ শেষ করতে পারেনি ডিএসসিসি। উল্টো ২৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২০ কোটি টাকায়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে ঢাকা দক্ষিণে ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নের কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় দুটি পার্ক ও খেলার মাঠের কাজ শুরু করা হয়নি। বাকি ২৯টির বেশিরভাগেরই ঠিকাদারির দায়িত্ব পায় নগর ভবনের তৎকালীন সিন্ডিকেটের দুই শীর্ষ ঠিকাদার, যারা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এ সুযোগে কাজ শুরুর পর পরই প্রায় সব পার্ক-খেলার মাঠ উন্নয়নের বাজেট বাড়ানো হয়। তার পরও ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। অথচ গত সিটি নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয় অসমাপ্ত তিনটি মাঠ। এর কয়েক দিন পরই এসব মাঠের ঘাস মরে যাওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ে সেগুলো ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮টি পার্কের মধ্যে গত তিন বছরে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র দুটির। সেগুলো হলো আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার ও সিক্কাটুলী পার্ক। ৮০ ভাগ বা তার বেশি কাজ হয়েছে মাত্র ছয়টির। এ ছাড়া বাকি পার্কগুলোর মধ্যে আজিমপুর শিশুপার্কের কাজ হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ, পান্থকুঞ্জের ১৬ শতাংশ, ওসমানী উদ্যোন ও বকশীবাজার পার্কের ৪০ শতাংশ, মালিটোলা পার্কের ৪৫ শতাংশ, মতিঝিল পার্কের ৬০ শতাংশ, বংশাল পার্কের ৬৫ শতাংশ, বশিরউদ্দিন ও শরাফতগঞ্জ পার্কের ৭০ শতাংশ, হাজারীবাগ ও যাত্রাবাড়ী পার্কের ৭৫ শতাংশ, গজমহল পার্কের ৮০ শতাংশ, সিরাজউদ্দৌলা পার্কের ৮৫ শতাংশ, রসুলবাগ শিশুপার্কের ৯০ শতাংশ এবং গুলিস্তান ও নবাবগঞ্জ পার্কের ৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ানবাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কটি। কাজ শুরুর পরেই আলোচনায় আসে এর ভেতরে এলিভেটেড এক্সপ্রেক্স ওয়ের খুঁটি বসানোর বিষয়টি। যদিও পরে তা বাতিল হলেও নানা জটিলতায় পার্কটির সংস্কার কাজ আর শুরু হয়নি। মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়া কার্যত কোনো কাজই হয়নি গত ২৪ মাসে।
উদ্বোধন হওয়া মাঠের মধ্যে একটি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলাউদ্দিন পার্ক’, স্থানীয়দের কাছে যেটি বাসাবো মাঠ নামে পরিচিত। গত বছরের ২৬ নভেম্বর জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। তবে স্থানীয়দের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও বেশিরভাগ সময়ই রাখা হয় বন্ধ। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এখনো কাজ চলছে।
এদিকে ১১টি খেলার মাঠের মধ্যে একটিরও শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে শহীদনগর মিনি স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ, সামসাবাদ মাঠের ১৫ শতাংশ, বাংলাদেশ মাঠের ২০ শতাংশ, কলাবাগান খেলার মাঠের ৫০ শতাংশ, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের ৫৫ শতাংশ, বালুরঘাট মাঠের ৬০ শতাংশ, দেলোয়ার হোসেন মাঠের ৭০ শতাংশ, গোলাপবাগ মাঠের ৭৫ শতাংশ, বাসাবো মাঠের ৯৫ শতাংশ এবং শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠের ৯৬ শতাংশ। যথাসময়ে কাজ শেষ না হলেও ২৯টি পার্ক ও খেলার মাঠের সংস্কার ও উন্নয়নে প্রথমপর্যায়ে ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল আনুমানিক ২৩০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২০ কোটি টাকা।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, জল সবুজে ঢাকা প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তাই নতুন মেয়র হিসেবে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই ওই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে প্রকল্পটির পরিচালকের দায়িত্ব পান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুনশী মো. আবুল হাসেম।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মুনশী মো. আবুল হাসেম আমাদের সময়কে বলেন, ‘নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরেই খেলার মাঠ ও পার্কের সংস্কারকাজের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। দ্রুতই কাজগুলো শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। তবে এর মধ্যে কয়েকটির টেন্ডার হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে সময় লাগবে।’