স্বদেশ ডেস্ক:
লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে গত সোমবার সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে নিজেদের কমপক্ষে ২০ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ভারত দাবি করছে এ সংঘর্ষে তাদের আরও ১৭ জন আহত হয়েছেন।
ভারতীয় সেনাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দায়িত্বরত অবস্থায় ‘ডি-এসক্যালেশন’ বা উত্তেজনা প্রশমনের প্রক্রিয়া চলছিল, তখনই দুপক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তাদের কমপক্ষে ২০ সেনা নিহত হন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্ববৌমত্ব ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকের।
কোনো কোনো সামরিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, একটা পর্যায়ে চীনা সৈন্যরা এলএসি অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতর প্রায় চল্লিশ থেকে ষাট কিলোমিটার ঢুকে পড়েছিল, যদিও আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে ভারত এ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের অভিযোগ, চীন দেশটির ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে।
গত তিন দশকে বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড এবং সীমান্ত সংকট নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। মে মাসে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিকিম সীমান্তে চীনের বাড়তি সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সরাসরি সংঘর্ষেও গড়ায়।
২০১৭ সালে বিতর্কিত মালভূমিতে চীন তার সীমান্ত সড়ক বাড়ানোর চেষ্টা করলে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
চীন এবং ভারত দুটি দেশই সামরিক শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর, এর আগে বেশ কয়েকবারই তারা সীমান্তে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দুই দেশের মধ্যকার যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অর্থাৎ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি সেটিও অত্যন্ত দুর্বল।
দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি নদী, হ্রদ এবং শৈলপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে, যার মানে হচ্ছে সীমানা যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরো সংঘর্ষের উস্কানি হিসেবে কাজ করবে।
দুই পক্ষই বলছে, গত চার দশকে চীন ও ভারতের মধ্যে কোনো গুলি বিনিময় হয়নি। আজ মঙ্গলবারও ভারতীয় বাহিনী দাবি করেছে, তারা কোনো গুলি চালায়নি।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতীয় সৈন্যদের পিটিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। ভারত সম্প্রতি লাদাখের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় একটি নতুন রাস্তা বানিয়েছে। কোনো সংঘর্ষ হলে ওই রাস্তা দিয়ে দিল্লি সহজেই সীমান্ত এলাকায় সৈন্য এবং মালামাল পাঠাতে পারবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওই এলাকার অবকাঠামো যে ভারত নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাইছে, তার ফলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে চীন।