মো: শামীম আল-মামুন:
অনেক দিন ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু নানা বাধার মুখে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এবার থেকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। তবে কতটা সফলতার সাথে চলতে পারে এই পদ্ধতি তা নিয়ে শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। এই ভর্তিপদ্ধতি বাস্তবায়ন নিয়ে অস্বস্তিতেই রয়েছে ইউজিসি।
এ পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীরা যেমন পাবেন বহুবিধ সুবিধা; তেমনি সম্মুখীন হতে পারেন কিছু অসুবিধার। এই পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই। যেমন- বর্তমান সময়ে একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে অনেক কষ্ট করে যেতে হয় দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। অনেকে হয়তো পরীক্ষার জন্য আবেদন করেও অর্থাভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন না অথবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে অনেক সময় রাস্তাঘাট চিনতে না পেরে পড়ে যান বিপাকে। আবার অনেকের হয় রাতে থাকার টেনশন, অনেকেই আবার ভ্রমণের ফলে হয়ে পড়েন অসুস্থ, আবার অনেক শিক্ষার্থী খুঁজে পান না পরীক্ষার হল। বিশেষ করে মেয়েদের পড়তে হয় অবর্ণনীয় বিপাকে। আমাদের দেশের মেয়েদের সাধারণত পরিবারের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে দেয়া হয় না। এতে করে দেখা যায়, অনেক মেধাবী মেয়ের ইচ্ছা থাকলেও উপায় হয়ে ওঠে না। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমের দাম ভিন্ন হওয়ার কারণে ফরম বাবদও অনেক টাকা খরচ করতে হয় পরীক্ষার্থীদের।
এসবের বাইরেও আছে অনেক ঝামেলা। যেমন- এ পদ্ধতি থাকার কারণে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলে যেতে চান না; তেমনি এ কারণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকে স্থানীয়দের প্রভাব। এই প্রভাবের কারণে যেমন এক দিকে প্রভাবিত হতে পারে শুদ্ধ ভাষা শিক্ষা, অন্য দিকে তৈরি হতে পারে দলগত প্রভাবের মতো সমস্যা। এ পদ্ধতিটি সৃষ্টি করতে পারে একটি নতুন যুগের সূচনা। কমতে পারে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি। কমতে পারে অযথা টাকা খরচ। দূর হতে পারে যাতায়াত সমস্যা। সমাধান হতে পারে আঞ্চলিকতা সমস্যার। কমতে পারে স্থানীয়দের প্রভাব। দূর হতে পারে থাকা এবং পরীক্ষার হল খোঁজাখুঁজি করার চিন্তা। বাড়তে পারে মেয়েদের পরীক্ষার সুযোগ। হতে পারে সহজে অনেক কিছুর সমাধান। কিন্তু ঘটতে পারে মেডিক্যাল প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং অনুসারে মেরিট নির্ধারণের কারণে সৃষ্টি হতে পারে বৈষম্য। কারণ, প্রথম দিকে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবে প্রথম দিকের স্টুডেন্ট আর এভাবে মেরিট অনুসারে সাজালে বিপাকে পড়তে পারে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কারণ, এতে করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ক্যাটাগরির স্টুডেন্টই বেশি থাকবে। এতে কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এখন যেমন একজন ছাত্র কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থতাজনিত কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পান। তখন এই সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। গুচ্ছ পদ্ধতিভিত্তিক পরীক্ষার কারণে ঘটতে পারে স্বজনপ্রীতির মতো ঘটনা। আর প্রতিষ্ঠানের দিক বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হারাতে পারে বড় আয়ের উৎস।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া