বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৩,৩১৩ কোটি টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৩,৩১৩ কোটি টাকা

স্বদেশ ডেস্ক:

অবলোপন ও ২ শতাংশ পরিশোধ করে ঋণ নিয়মিতকরণের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমলেও এখনো তা উদ্বেগজনক মাত্রায় রয়ে গেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।

গত বছরের জুনে যা ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ছয় মাসে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমেছে ১০ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। এখনো খেলাপি ঋণের শীর্ষে আছে জনতা ব্যাংক। এ ব্যাংকে ডিসেম্বর শেষে খেলাপিঋণের স্থিতি ছিল ১৪ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে যা ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।

বার্ষিক কর্মসম্পদান চুক্তির (এপিএ) শর্ত অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এই উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে উপস্থাপিত ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, খেলাপি ঋণের শীর্ষে এখনো জনতা ব্যাংক। এর পরে ক্রমান্বয়ে রয়েছে সোনালী, বেসিক, অগ্রণী, রূপালী ও বিডিবিএল।

জনতা ব্যাংক : গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত দুই বছর ধরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বেড়েছিল। এর পূর্ববর্তী (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকায় রয়েছে ‘অ্যানন ট্রেক্স’ নামে একটি গ্রুপ। যারা জালিয়াতি করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা এই ব্যংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।

সোনালী ব্যাংক : গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংক : গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে, গত দুই বছর ধরে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৭০ কোটি টাকা বেড়েছিল। এর পূর্ববর্তী (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বেড়েছিল। এক সময় সরকারি খাতের ভালো এই ব্যাংকটি সরকার ঘনিষ্ঠ আবদুল হাই বাচ্চুকে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর থেকে ব্যাংকটির অধঃপতন শুরু হয়।

অগ্রণী ব্যাংক : গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৪৭ কোটি টাকা। ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে, গত দুই বছর ধরে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৪৬৯ কোটি টাকা বেড়েছিল। এর পূর্ববর্তী (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৫৫৮ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংক : গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে, সর্বশেষ গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৩৬ কোটি টাকা কমেছে। তবে এর পূর্ববর্তী (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১৫৭ কোটি টাকা বেড়েছিল।

বিডিবিএল ব্যাংক : গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৬৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৯০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে বিডিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩৭ কোটি টাকা। ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে, সর্বশেষ গত অর্থবছরে বিডিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৬ কোটি টাকা বেড়েছিল। তবে এর পূর্ববর্তী (২০১৭-১৮) অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৪৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা কমেছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূলত ঋণ অবলোপন ও ২ শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণের সুযোগ দেয়ার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। তবে বাস্তবে এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কতটুকু কমেছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877