ডা. অমৃত লাল হালদার শিশু ও নবজাতকের রোগ বিশেষজ্ঞ পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হয়- এ কথা সবাই জানেন। পাতলা পায়খানা হলে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
এ শূন্যতা পূরণ করে খাবার স্যালাইন। কিন্তু অনেক বাবা-মা স্যালাইন তৈরি ও খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম জানেন না। সঠিক নিয়মে খাবার স্যালাইন না বানালে এবং না খাওয়ালে তা শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
advertisement
এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। প্রথম যে সমস্যা বেশি হচ্ছে তা হলো- ওরস্যালাইন প্যাকেট থেকে কিছু পাউডার নিয়ে অল্প কিছু পানির সঙ্গে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানো। অথচ ওরস্যালাইন বানানোর ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। অনেকে তা খেয়ালই করেন না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় ডাক্তার যে পরিমাণ খাওয়াতে বলেন, তা না মেনে অনেক বেশি স্যালাইন খাওয়ান।
হয়তো ভাবেন, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে কিংবা স্যালাইন বেশি খাওয়ালে কি আর এমন হবে। লবণ আর পানিই তো! মারাত্মক ভাবনা! শিশুর বয়স, ওজন এবং পানিশূন্যতার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে স্যালাইন খাওয়ানোর পরিমাণ আলাদা হয়। ডাক্তার হিসেব করে বলে দেন কতটুকু খাওয়াতে হবে। মনে রাখবেন, এ দুটি ভুলে শিশুর শরীরে লবণের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যেতে পারে।
দেহে লবণের ভারসাম্য ধ্বংস হয়ে অনেক সময় কিডনি কাজ বন্ধ করে দিতে পারে অথবা ঠিক মতো কাজ করতে না পারে। তাতে কেউ কেউ মারাও যায়। আবার একই কারণে মস্তিষ্কের এমন কিছু মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, যাতে অনেকে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। তাই সাবধান! স্যালাইন বানাতে হবে প্যাকেটে লেখা নিয়মমতো। আধা লিটার পানিতে ১ প্যাকেটের পুরো ওরস্যালাইন মেশাতে হবে। এর চেয়ে বেশিও না, আবার কমও না।
শিশুর ক্ষেত্রে কতটুকু স্যালাইন খাওয়াতে হবে, তা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে। ভালো হবে, যদি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খাওয়ানো হয়। মনে রাখবেন, কখনো গরম বা ঠা-া পানিতে স্যালাইন বানানো যাবে না। পানি ফুটিয়ে ঠা-া করে নরমাল তাপমাত্রায় এলে তারপর স্যালাইন মেশাবেন। বানানো স্যালাইন ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। এরপরে খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
১২ ঘণ্টা পর স্যালাইন খাওয়ার প্রয়োজন হলে তৈরি স্যালাইন ফেলে দিয়ে একই পদ্ধতিতে নতুনভাবে বানিয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, স্যালাইন যেমন হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচায়, তেমনি এর সঠিক ব্যবহার না করলে হতে পারে মৃত্যুর কারণ।
লেখক : আবাসিক চিকিৎসক, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ (মহিলা ও শিশু হাসপাতাল), সেগুনবাগিচা, ঢাকা ০১৬৩৬৬৯২২৯৮, ৯৫১১০১০-২১