নিজে না খেয়ে এক সময় যে ছেলের মুখে খাবার তুলে দিয়ে আদর-যত্নে বড় করেছেন। সেই মায়ের ঠাঁই হয়নি ছেলের দোতলা বাড়িতে। ৮৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা রশি বেগমের ঠাঁই হয়েছে অন্যের জায়গায়, ঝুপড়ি ঘরে।
শেষ বয়সে নানা জটিল রোগে ভুগছেন বৃদ্ধা এই মা। ঝুপড়ি ঘরে বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। কিন্তু তার খোঁজ নেওয়ার সময় নেই মায়ের টাকায় দোতলা ভবন বানানো ছেলে মো. ইউনুস ফকিরের। মাকে ছাড়া সেই ভবনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন তিনি।
advertisement
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের ঘটনা এটি। ওই গ্রামের মৃত কাশেম ফকির ও রশি বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে ইউনুস ফকির।
ইউনুস ফকিরের এক প্রতিবেশী জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর আর কোনো ভাই-বোন না থাকায় তার সব সম্পত্তির মালিক হন রশি বেগম। তিনি প্রায় এক যুগ আগে তার একমাত্র ছেলে ইউনুসের জন্য বাবার বাড়ির সব সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা তুলে দেন ছেলের হাতে। সেই টাকা দিয়ে ইউনুস নির্মাণ করেন দোতলা ভবন।
তিনি জানান, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইউনুস ওই ভবনে থাকলেও মায়ের ঠিকানা হয়েছে রশি বেগমের চাচাতো বোনের দেওয়া এক টুকরো জায়গার একটি ঝুপড়ি ঘরে।
রশি বেগমের খালু খলিল মিয়া জানান, অনেক দিন আগে রশি বেগমকে তার ছেলে ও পুত্রবধূ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর স্থানীয়রা তাকে কোনো রকমে থাকার মতো একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে দেন। সেখানেই থাকেন তিনি। ছেলে ইউনুস মায়ের কোনো খবর রাখেন না, দেন না কোনো খরচ। এমনকি নাতিরাও দাদির খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয় না। এ অবস্থায় প্রতিবেশীরা খাবার দিলে রশি বেগম খান, না দিলে না খেয়ে থাকেন।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বয়সের ভারে নানা জটিল রোগে অসুস্থ রশি বেগম এখন ভালোমতো কানে শোনেন না। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না তিনি। কেউ কিছু বললে তাকিয়ে থাকেন এই বৃদ্ধা। এরই মধ্যে গত রোববার ইউনুস ফকির প্রতিবেশী মো. মাহাবুবের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা বেগমকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ইউনুসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, ইউনুসের বিরুদ্ধে এলাকায় জমি দখল, চুরি, জমি রেকর্ড করে দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, লোকজনকে হয়রানি করা, প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
রশি বেগমকে আশ্রায় দেওয়া চাচাতো বোন হায়াতুন বেগম জানান, ছেলের বিপদের কথা শুনে হউ-মাউ করে কেঁদেছেন বৃদ্ধা রশি বেগম।