স্বদেশ ডেস্ক: একটা সময় ছিল লাল কাদামাটির টিলা। ধীরে ধীরে সেই টিলাগুলো রূপ নিয়েছে গ্রিন গ্যালারিতে। মাঝখানে এখন সবুজ ঘাস লাগানো আর উইকেট তৈরির অপেক্ষা। হ্যাঁ, এরপরই তৈরি হয়ে যাবে দেশের সবচেয়ে সুন্দর আউটার স্টেডিয়াম। তবে এটিকে শুধুই একটি ‘আউটার স্টেডিয়াম’ বলতে চান না সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি বলেন, ‘এটি দেশের সাধারণ কোনো আউটার স্টেডিয়ামের মতো হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব শর্ত পূরণ করে সব রকম সুযোগ-সুবিধা থাকছে এটিতে। আধুনিক ড্রেসিং রুম, গ্রিন গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য বসা, খাবার ছাড়াও সৌচাগার সুবিধা- সব থাকবে এখানে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্মাণ করবে একটি একাডেমি ভবন, ক্রিকেটারদের থাকার জন্য ডর্মেটরি। জুলাইয়ের মধ্যে মূলত মাঠ ও গ্যালারির কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখানে জাতীয় লীগ থেকে শুরু করে সব ধরনের ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন করা যাবে। তবে আমি এটিকে আউটার স্টেডিয়াম বলতে রাজি নই। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে, সিলেট গ্রাউন্ড-২ বা অন্য কোনো নাম দিতে চাই। একটি স্টেডিয়াম থাকতেও এর পাশে আরো একটি তৈরি করতে অনেক কাঠখর পোড়াতে হয়েছে। অনেক বাধা এসেছে। কিন্তু এখানকার ক্রিকেট সংগঠকদের খেলার প্রতি ভালবাসার কারণে সব বাধা পেরিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের আরো একটা স্বপ্ন বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে।’
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মিডিয়া বক্সের পিছনে টিলা কেটে কাজ শুরু হয় আউটার স্টেডিয়ামের। যা তিব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। সিলেট আন্তর্জতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের স্থপতি মাসুদুর রহমান খানই এটির নকশা করছেন। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতীকী মূল্যে ৯ একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে নয়া এই স্টেডিয়াম। কেন এটি দেশের অন্য আউটার স্টেডিয়াম থেকে আলাদা! স্থপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘অবশ্যই এটি দেশের অন্য যে কোনো স্টেডিয়াম থেকে আলদা। এখানে ঘরোয়া ক্রিকেটাররা পাবেন আন্তর্জাতিক সব সুবিধা। এছাড়াও এখানে পাহাড় ও টিলাকে একেবারে কেটে ফেলা হয়নি। আমরা ভবনগুলোকে পাহাড়ের ভিতরে এমন ভাবে স্থাপন করেছি যেটি বাংলাদেশের কোথাও নেই। এতে করে আমাদের ভবন করতে পাহাড় কেটে সমতল করে নিতে হয়নি। উদাহারণ হিসেবে বলতে পারি, ডেসিং রুমে দ্বিতীয় তলা দিয়ে এক তলায় প্রবেশ করতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো প্রকৃতি কোনভাবেই যেন নষ্ট না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। সবুজকে প্রধান্য দিতে টিলাগুলো সবই গ্রিন গ্যালারি করা হয়েছে। আমিও এটিকে আউটার স্টেডিয়াম বলতে চাই না। আমরা বেশ কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা করেছি। সিলেট গার্ডেন, কিংবা সুরমা গার্ডেন এমন কয়েকটি নাম ভাবনায় আছে। যেমনটা লর্ডস কিংবা ইডেন গার্ডেন্স আলাদা বৈশিষ্ট বহন করে আমরাও চাই এটি আলাদা হোক।’
প্রায় দেড়শ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
ঠিক তারই লাগোয়া আরেকটি স্টেডিয়ামকে অনেকেই বিলাসিতা বলেই সমালোচনা করেছেন। এমনকি খেলার চেয়ে অবকাঠামো নির্মাণের প্রতি বেশি মনোযোগ বলেও অভিযোগ কম ছিল না। শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘আমি খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত তেমন ছিলাম না। রাজনীতিতেই বেশি পরিচিত। কিন্ত ক্রিকেটের প্রতি টান ছিল। তাই সংগঠক হিসেবে আমি যেটি অনুভব করেছি তা হলো খেলোয়াড়ের পাইপ লাইন তৈরি করতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত মাঠ। আমি একটি মাঠে খেলিয়ে ক্রিকেটার তৈরি করতে পারবো না। বয়সভিত্তিক দল খেলাতে হবে, তৃতীয় বিভাগ থেকে শুরু করে প্রথম বিভাগ সব জয়গাতে নিয়মিত খেলা হলেই ক্রিকেটারদের পাইপ লাইন শক্ত হবে। সেখান থেকে জাতীয় দলে আমরা ভালো ভালো ক্রিকেটার পাব। দেশের প্রায় প্রতিটি ক্রীড়া সংগঠক ভীষণ চাপে আছে লীগ আয়োজন করতে না পেরে। তার বড় কারণও মাঠের অভাব। আরেক বিষয় হলো আন্তর্জাতিক মানের উইকেট না থাকলে কিভাবে ভালো ক্রিকেটার পাবো! আমরা আসলে এটিই বোঝাতে চেষ্টা করেছি সরকারকে। তখন নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৎকালীন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। সেখানে আমি ছাড়াও সিলেটের অনেক সংগঠকের, রাজনীতিবিদের অবদান ছিল।’
সিলেটে নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম দুটি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। এখন শুধু অপেক্ষা এই স্টেডিয়াম দুটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে কতটা ভূমিকা পালন করে তা দেখার।