মানিক মজুমদার : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দক্ষিণে নিঝুম দ্বীপ। দ্বীপে সারি সারি কেওড়া বন। সবুজের অপূর্ব সমারোহ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্ব ও পশ্চিমে মেঘনার দিগন্ত বিস্তৃত ধু-ধু জলরাশি। আরো আছে হরিণের অবাধ বিচরণ, শীতকালীন অতিথি পাখি, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা । একারণে পর্যটকরা নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যান। শীতের শুরুতে দ্বীপের পানিতে ঝাঁকে-ঝাঁকে অতিথি পাখি দেখা যায়।
চল্লিশের দশকে হাতিয়ার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা ডুবোচরটির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের নাম ‘কর্নার অব চর ওসমান’। বালু থাকার কারণে জেলেরা চরটির নাম দিয়েছে ‘বাল্লারচর’। সত্তরের দশকে ওসমান বাতাইন্নার নামে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় চর ওসমান । বন বিভাগ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ৭৪ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত ৩১টি হরিণ, ছয়টি বানর এবং পাঁচটি অজগর সাপ কমলার চরের বনে ছেড়ে দেয়। সত্তর ও আশির দশকে কমলারচরে হাতিয়াবাসীর হাজার হাজার গরু-মহিষ ছাড়াও উদ বিড়াল, গুঁইসাপ ও অন্যান্য সাপ এবং কাঁকড়া ছিল। নিঝুম দ্বীপ থেকে ইলিশ ও অন্যান্য মাছ এবং কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর নিঝুম দ্বীপে বানর দেখা যায়না। অন্যান্য প্রজাতির অনেক প্রাণীও লোপ পায়। ২০০৮ সালে নিঝুম দ্বীপের পূর্বদিকের সাগর দ্বীপে (চর বাহাউদ্দিন বা দমার চর) পানিকাটা পাখি (ইন্ডিয়ান স্কিমার) নামের এক ধরনের বিরল প্রজাতির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পাখি ছিল। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর তিন দেশে এ পাখি দেখা যায়।
হাতিয়ার পশ্চিম উপকূলের মেঘনার শাখা শাহবাজপুর চ্যানেলের একটি শাখা নিঝুম দ্বীপে ঢুকেছে। নিঝুম দ্বীপের ‘গেটওয়ে’ ওই চ্যানেলটি দিয়ে দর্শনার্থীরা নৌপথে নিঝুম দ্বীপে যান। তমরদ্দি, জাহাজমারা ও রামচরণ ঘাট থেকে যাত্রীবাহী ট্রলারে নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার ও বন্দরটিলায় যাওয়া যায়। জাহাজমারা বাজার থেকে রিকশা, বেবিট্যাক্সি বা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে মোক্তাইরার ঘাট, তারপর মোক্তাইরার ফেরি পার হলেই নিঝুম দ্বীপ। সংরক্ষিত বন হিসেবে নিঝুম দ্বীেপর আয়তন প্রায় ৮৪ বর্গকিলোমিটার। ২০০১ সালে সরকার দ্বীপটিতে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে। নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের ভালো সময় নভেম্বর থেকে মে। গাইড থাকলে যেকোনো সময় নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়। বিভিন্ন ঋতুতে নিঝুম দ্বীপে প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ উপভোগ করতে পারবেন।
যাবেন কীভাবে
ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেলে ছেড়ে দুটি লঞ্চ পরদিন সকালবেলা হাতিয়ার তমুরউদ্দিন লঞ্চঘাটে পৌঁছায়। সায়েদাবাদ থেকে বাসে সোনাপুর, সোনাপুর থেকে বাসে বা সিএনজিতে বয়ারচর চেয়ারম্যানঘাট, সেখান থেকে সি-ট্রাকে, ট্রলারে বা স্পিডবোটে মেঘনা পার হলে নলচিরাঘাট, তারপর বাসে, বেবিট্যাক্সিতে বা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে উপজেলা সদর ওছখালী পৌঁছাতে হবে। বৃহস্পতি ও সোমবার সকাল ৯টায় যাত্রীবাহী জাহাজ হাতিয়ার নলচিরাঘাটের উদ্দেশে চট্টগ্রামের সদরঘাট ছেড়ে যায়।
কোথায় থাকবেন
নামার বাজারে আছে ‘নিঝুম রিসোর্ট’। যোগাযোগ করলে নিঝুম দ্বীপে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ : অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, নিউ ইস্কাটন রোড, সামছুদ্দিন ম্যানসন, নবমতলা, ঢাকা, ফোন : ০১৭১৩-১৪৫৫৮৪ , ৮৩৫৮৪৮৫। নিঝুম দ্বীপ : হোটেল সাহেন : ফোন : ০১৮৬৮-৬১২৩২৩, হোটেল সোহেল : ফোন : ০১৮৩২-৮৮৮৫৩১, হোটেল নিঝুম সি প্যালেস ফোন : ০১৮৪২-৯৪৪২৮১ , নিঝুম দ্বীপান্তর রিসোর্ট, ফোন : ০১৮১৯-১৮৩০৪৩। বন্দরটিলায় ড্রিমল্যান্ড আবাসিক, ঢাকা হোটেল, বন্দরটিলা রেস্ট হাউজ ছাড়াও রয়েছে ‘নিঝুম দ্বীপ পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র’। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও দর্শনার্থীদের যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া ও পর্যটন স্পটগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। ফোন : ০১৭১১-৩৬২২১৪, ০১৭৭৪-৮৫৪৬৮৩।