শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাবরি মসজিদ, কাশ্মীরের পর মোদির টার্গেটে যে দুটি ইস্যু

বাবরি মসজিদ, কাশ্মীরের পর মোদির টার্গেটে যে দুটি ইস্যু

স্বদেশ ডেস্ক ॥ বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের আদেশের পর মোদির টার্গেট এবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস এবং মুসলিম পারিবারকি আইন রদ করা। ভারতের জাতীয় সংসদ লোকসভার আসন্ন অধিবেশনেই তোলা হচ্ছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। একইসাথে মুসলিম পারিবারিক আইন রদ করে অভিন্ন দেওয়ানি আইনের দাবি জোরদার করছেন বিজেপি নেতারা। ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির দ্বিতীয় দফার ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিন ছিল গত ৫ আগস্ট ও ৯ নভেম্বর। ৫ আগস্টে সরকার আচমকা এক আদেশে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেয়। তার তিনমাস পর সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদের চত্বরের মালিকানা বিতর্কের মামলায় রাম মন্দিরের পক্ষে রায় দেয়। ফলে বাবরি মসজিদের জায়গায় একটি রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ সুগম হয়ে যায় বিজেপির জন্য।
ভারতের রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন- কাশ্মীর এবং অযোধ্যার পর মোদি সরকারের সামনে বড় রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা এখন কী। ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিজেপির রাজনীতির একজন বিশ্লেষক প্রদীপ সিংকে উদ্ধৃত করে দিল্লিতে বিবিসি হিন্দির নভিন নেগি বলছেন, বিজেপির রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার তালিকায় প্রথম তিনটি ছিল- অযোধ্যায় রাম মন্দির, সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং মুসলিম পারিবারিক আইন রদ করে অভিন্ন দেওয়ানি আইন। প্রদীপ সিং বলছেন, দুটি লক্ষ্য হাসিল হয়েছে, এখন তাদের টার্গেট ইউনিফর্ম সিভিল কোড অর্থাৎ অভিন্ন দেওয়ানি আইন। দিল্লিতে বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষ বলছেন, অভিন্ন দেওয়ানি আইনেরও আগে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে এগোতে চাইছে বিজেপি।
সোমবার থেকে লোকসভার যে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে তার কার্য-তালিকায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল রাখা হয়েছে। এই আইনে প্রস্তাব করা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘু (হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্সি বা খ্রিস্টান) যারা ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের আগে ভারতে এসেছেন, তারা চাইলে নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু কোনো মুসলমান সেই সুযোগ পাবেন না। প্রস্তাবিত এই আইন নিয়ে ভারতে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত হলে তা ভারতের সংবিধানের বরখেলাপ হবে। তাদের কথা, এমন আইন করতে হলে সংবিধান বদলাতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রদীপ সিং বলছেন, নাগরিকত্ব এবং এনআরসি নিয়ে বিজেপি এরই মধ্যে অনেকদূর এগিয়েছে এবং এ দুটিকে তারা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই সাথে মোদি সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডা হচ্ছে ভারতে অভিন্ন একটি দেওয়ানি আইন প্রতিষ্ঠা।
অভিন্ন দেওয়ানি আইন কি?
ভারতের দেওয়ানি আইনে বিয়ে, পরিবার, সম্পত্তির ভাগাভাগি- এরকম কিছু বিষয়ে ধর্মীয় রীতিনীতি এবং বিধিনিষেধকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিমদের পারিবারিক আইন নিয়ে কট্টর হিন্দু দলগুলোর সবসময় আপত্তি ছিল।
বিজেপি বহুদিন ধরেই বলে আসছে, তারা ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড অর্থাৎ অভিন্ন দেওয়ানি আইন করতে চায়; যেখানে বিশেষ কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কোনো বিধি থাকবে না। বিজেপি নেতারা বিভিন্ন ফোরামে এই অভিন্ন দেওয়ানি আইনের দাবি জোরদার করতে শুরু করেছেন।
বিজেপির জেনারেল সেক্রেটারি রাম মাধব থেকে শুরু করে প্রভাবশালী বিজেপি নেতা নাশিক কান্ত দুবে লোকসভার প্রথম অধিবেশনেই খোলাখুলি দাবি করেছেন, অভিন্ন দেওয়ানি আইন করতে হবে। শুভজ্যোতি ঘোষ বলছেন, এ বছরেই তিন-তালাক নিষিদ্ধ করার পর মুসলিম পারিবারিক আইনকে এমনিতেই অনেকটাই খাটো করে দিয়েছে বিজেপি সরকার।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রদীপ সিং মনে করেন, নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নের চেয়ে অভিন্ন দেওয়ানি আইন প্রতিষ্ঠা বিজেপির জন্য অধিকতর কষ্টকর হতে পারে। তিনি বলছেন, শুধু মুসলিমরাই নয়, বিয়ে এবং সম্পত্তি নিয়ে ভারতের অন্যান্য অনেক ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন প্রচলিত বিধি রয়েছে। সেগুলো বাতিল করলে অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়বেন।
হিন্দু রাষ্ট্রের পথে হাঁটছেন মোদি?
কাশ্মীর, অযোধ্যা, নাগরিকত্ব আইন বা অভিন্ন দেওয়ানি আইন, এগুলোর সবগুলোর পেছনেই যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ছায়া রয়েছে তা নিয়ে কারোরই তেমন কোনো সন্দেহ নেই। শুভজ্যোতি ঘোষ বলছেন, বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং-সেবক সংঘ) সবসময়ই খোলাখুলি বলে এসেছে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র হলেও, ভারতকে জোর করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বানানো হয়েছে।
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্য আরএসএসের ডিএনএ-তেই রয়েছে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ, অযোধ্যায় রাম মন্দির; এগুলো তারই একেকটি ধাপ। নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং অভিন্ন দেওয়ানি আইনও সেই ধাপেরই অংশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877