মাওলানা দৌলত আলী খান: রাস্তা মানবজাতির সহায়ক পথ। রাস্তার সঙ্গে মানুষের বিশাল এক গভীর মিতালি রয়েছে। রাস্তাবিহীন মানবজাতির বসবাস অসম্ভব। চলাফেরা অক্ষম। তাই রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। রাস্তায় চলা শুধু চলাই নয়, বরং একটি ইবাদতও। কারণ, নবী করিম (সা.) পথচলার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন এবং এর সুন্নত তরিকার শিক্ষাও দিয়েছেন। যদি মানবজাতি চলার পথে এ সুন্নত তরিকার অবলম্বন করে তাহলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। যেমন রাস্তায় নিচের দিকে তাকিয়ে চলা, ডানদিকে চলা, জিকিরে-ফিকিরে চলা ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশের সড়কে রাস্তার কিছু সুন্নত আদায় হলেও কিন্তু ডানদিকে চলার সুন্নত পালন হয় না। কারণ, বাংলাদেশের সড়কে বামদিকে চলার প্রথা দীর্ঘদিন থেকে। তাই ডানদিকের চলার প্রচলন জাতীয় সড়কনীতিমালার বিরোধী। যার দরুন মুুসলিম পথচারীদের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সড়কে পরিপূর্ণ সুন্নত তরিকায় চলা খুবই কঠিন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কিছু আরব রাষ্ট্রে ডানদিকে চলাসহ সুন্নত তরিকার অনুসরণ করা সম্ভব হয়। এসব রাষ্ট্রে ডানপাশে চলাই হলো সড়কনীতির অন্তর্ভুক্ত। যাই হোক, মুসলিম উম্মাহকে যাতায়াতের পথে সুন্নত তরিকার অনুসরণ করাই হলো মুসলিম পথচারীর পরিচয়।
রাস্তার হক পাঁচটি: ইসলামে প্রত্যেক জিনিসের পৃথক পৃথক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। একইভাবে মুসলিম উম্মাহর জন্য পথচলার একটি পবিত্র অধিকার রয়েছে। পথে বা রাস্তায় চলার সময় ওইসব অধিকার বাস্তবায়নে সচেতন হওয়া উচিত। যদি মুসলমানরা এ অধিকার বাস্তবায়নে সচেতন হন, তাহলে সভ্য ও আদর্শ সমাজ গঠন হবে। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হবে। চলার পথে হৃদ্যতা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রাস্তার পাঁচটি হক আদায় করা। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা থেকে বিরত থাক। অতঃপর সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের তো রাস্তার ওপর বসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। কেননা, আমরা তথায় বসে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তখন রাসুল (সা.) বলেন, যদি তোমরা বসতে বাধ্য হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কি! রাসুল (সা.) বললেন, ১. চক্ষু অবনত রাখা (নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে না তাকানো), ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া, ৩. সালামের উত্তর দেওয়া, ৪. উত্তম কাজের আদেশ করা, ৫. অশ্লীল কাজ থেকে নিষেধ করা। (বোখারি: ৬৩০১; মুসলিম: ৫৬৮৫)।
কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা: রাস্তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাস্তাকে পরিষ্কার রাখা। অপরিষ্কার রাস্তা দুর্ঘটনা ডেকে আনে। এছাড়া রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা ঈমানের ফজিলতময় শাখা। সড়কে গাড়ি ও যাত্রীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য সড়ককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ঈমানের সত্তরটিরও অধিক শাখা রয়েছে। তার শ্রেষ্ঠটি হলো আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেইÑএই ঘোষণা করা। আর নিম্নতরটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস অপসারিত করা এবং লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। (মুসলিম: ১৬২)।
রাস্তায় যেভাবে চলবে: নারী-পুরুষকে রাস্তায় প্রয়োজনের তাগিদে চলতে হয়। তবে এ চলাচলে ভদ্রতাও রক্ষা করতে হয়। অন্যথায় লোকেরা পথচারীকে অশুভ ধারণা করবে। যেমন নারীদের অনেককে পুরুষের মতো দাম্ভিকতা নিয়ে পথ চলতে দেখা যায়। অথচ নারীকে চলতে হবে রাস্তার পাশ দিয়ে, মধ্যখান দিয়ে নয়। এছাড়া নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে রাস্তায় একসঙ্গে চলা উচিত নয়, বরং নারীরা পুরুষের পেছনে চলবে। এটাই নারীর জন্য পথচলার সুন্নত তরিকা। আর পুরুষ রাস্তায় যাতায়াতকালে দুই মহিলার মাঝখানে চলা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, এভাবে চলা অভদ্রতার পরিচায়ক। হাদিসে আছে, হজরত আবু উসাইদ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুল (সা.) মসজিদের বাইরে ছিলেন, রাস্তায় পুরুষরা মহিলাদের সঙ্গে মিশে চলছে। এ সময় আবু উসাইদ শুনেছেন যে, রাসুল (সা.) মহিলাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা পুরুষদের পেছনে চলো। রাস্তার মধ্য দিয়ে চলা তোমাদের জন্য সমীচীন নয়, বরং রাস্তার পাশ দিয়ে চলবে। এ নির্দেশ শোনার পর তারা এমনভাবে প্রাচীর ঘেঁষে চলতে লাগল যে, কখনও কখনও তাদের কাপড় প্রাচীরের সঙ্গে আটকে যেত। (আবু দাউদ: ৫২৭৪)।
অন্য হাদিসে আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) পুরুষকে দুই মহিলার মাঝখানে চলতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ: ৫২৭৫)।