স্বদেশ ডেস্ক:
২০০৬ সালের ৩১ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক লীগের অবিভক্ত ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ দিন কমিটি না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছিলেন সংগঠনটির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা। আগামী ১১ ও ১২ নভেম্বর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় এখন আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দুই অংশের নেতারা। শীর্ষ পদ পেতে প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীর অফিস ও বাসায় সময়-অসময়ে গিয়ে হাজির হচ্ছেন ওয়ান ইলেভেনের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও মেধাবী ছাত্রনেতারা। তাদের দাবি, দলের দুঃসময়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করা হোক। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় নেতারাও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
জানা গেছে, এবার যারা পদপ্রত্যাশী তাদের প্রত্যেকের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশেষ করে যুবলীগের ক্যাসিনোকাণ্ডের পরে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তাদের কাউকেই কমিটির শীর্ষ পদ দেয়া হচ্ছে না, ইতোমধ্যে এমনটি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। মেধাবী, পরিশ্রমী, দক্ষ ও ক্লিন ইমেজের আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি গঠন করা হবে।
এরমধ্যে দক্ষিণে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি কামরুল হাসান রিপন, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মো: আনিসুজ্জামান রানাসহ ডজনখানেক নেতা। এর মধ্যে কামরুল হাসান রিপন ২০০১ সালে অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে ছাত্রনেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দেয়া হয়েছিল। অনেক হামলার শিকার হয়েছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন তাতে আমি স্বাগত জানাই। এ শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে আগামীতে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব উঠে আসবে। নেত্রী সব সময় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন। আশা করি, আগামী সম্মেলনেও নেত্রী ত্যাগী ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করবেন।
মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার বলেন, সব সময় স্বচ্ছ রাজনীতি করেছি। সংগঠনের সব তৃণমূল ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদেরও প্রত্যাশা, সংগঠনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে আগামী সম্মেলনে সৎ, শিক্ষিত, সাবেক ছাত্রনেতা, ত্যাগী ও পরিশ্রমীদের মধ্যে থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হোক। তাহলেই সংগঠন আরো গতিশীল, প্রাণবন্ত ও উজ্জীবিত হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার মামলায় পুলিশি নির্যাতনে মাদারীপুর ছেড়ে ঢাকা আসেন। ২০০২ সালে তিনি ক্রীড়া ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার হন। তিনি বলেন, মাদারীপুর জেলার ওয়ার্ড পর্যায় থেকে রাজনীতিটা করে আসছি। এখনো করছি। ১/১১-এর সময়ে নেত্রীর মুক্তির জন্য রাত-দিন বাহাউদ্দিন নাছিম ভাইয়ের নেতৃত্বে মাঠে ছিলাম। দলের দুর্দিনে সক্রিয়ভাবে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কখনো হাল ছাড়িনি। এখনো মাঠে রয়েছি। নেত্রী যখনই ডাকবেন, তখনই আমরা হাজির হব। মহানগর দক্ষিণে নেত্রী তার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করবেন এই প্রত্যাশা করছি।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদে আলোচনা রয়েছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন সরদার, মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: ইসহাক মিয়াসহ অন্তত ডজনখানেক নেতা। এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, প্রচার সম্পাদক দুলাল হোসেন, মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লায়ন এম এ লতিফসহ বেশ কয়েকজন। এরমধ্যে গোলাম রাব্বানী উত্তরের একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে বাহাউদ্দিন নাছিম ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে মাঠে থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা তার পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করবেন এটা আমরা আশা করছি।
মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ২০০১ সালের পর অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তেজগাঁও স্বেচ্ছাসেবক লীগের হাল ধরার পর আমাকে বারবার গ্রেফতার এবং নির্যাতন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমি ১/১১-এর সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে সংগ্রাম করেছি। আমি আশা করি, নেত্রী ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন।
সাবেক ছাত্রনেতা মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন- আমি এই অভিযানকে স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে আগামীতে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব উঠে আসবে।