স্বদেশ ডেস্ক:
যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনের মারলিবন সড়কে অবস্থিত ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল ‘লন্ডন ক্লিনিক’। এই হাসপাতালেই আজ বুধবার ভর্তি করা হবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে।
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার বিকেল ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন যুক্তরাজ্যের যে হাসপাতালে ভর্তি হতে যাচ্ছেন, সেই ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি চিকিৎসা নেন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, অভিনেতা ও ধনাঢ্য ব্যক্তি।
প্রায় শত বছরের পুরনো বেসরকারি এই হাসপাতালের অবস্থান সেন্ট্রাল লন্ডনের ডেভনশায়ার প্লেস ও মেরিলিবন সড়কে। এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবেও পরিচতি।
নিজেদের চিকিৎসা সেবার বিশেষত্ব সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রটি বলছে, ‘লন্ডন ক্লিনিকের ব্রেস্ট (স্তন), ইউরোলজি, গাইনোকলজি (স্ত্রীরোগবিদ্যা) ও চর্মরোগ চিকিৎসায় সুনাম রয়েছে। আমরা স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন ও সেলুলার থেরাপির মান নিয়েও অনেক সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছি।’
হাসপাতালের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘আমাদের ডাচেস অব ডেভনশায়ার উইংকে চমৎকার ক্যানসার সেন্টার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ম্যাকমিলান কোয়ালিটি এনভায়রনমেন্ট মার্ক (এমকিউইএম)।’ এর বাইরে রোগীদের দ্রুত সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সেবা দিয়ে থাকে হাসপাতালটি।
লন্ডন ক্লিনিকের যাত্রা শুরু ১৯৩২ সালে। তৎকালীন ডিউক ও ডাচেস অব ইয়র্ক এটি উদ্বোধন করেন। ১৯৯১ সালে এর এমআরআই ইউনিট উদ্বোধন করেন প্রিন্সেস মার্গারেট। ২০১০ সালে ক্যানসার ইউনিট উদ্বোধন করেন প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান পর্যবেক্ষণ করে ‘কেয়ার কোয়ালিটি কমিশন’। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে কাজ করা এই কমিশনের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডন ক্লিনিকের বহির্বিভাগে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ ১০ হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় ২৩ হাজার রোগী।
এই হাসপাতালে প্রোস্টেট ক্যানসারের রোগীদের জন্য রয়েছে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা। এন্ডোস্কপির জন্য রয়েছে ‘স্পাইগ্লাস’ প্রযুক্তি। ক্যানসার রোগীদের জন্য আছে ‘সিএআর-টি’ ইমিউনোথেরাপি। ২০১৯ সালে লন্ডন ক্লিনিকে রোবোটিক সার্জারি ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়।
উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। তাকে লিভার প্রতিস্থাপনের জন্যই বিদেশে নেওয়ার কথা বলে আসছিলেন বিএনপি নেতারা।
লন্ডন ক্লিনিক তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, তাদের হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয় না। সেখানে খালেদা জিয়ার কী ধরনের চিকিৎসা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে জানাননি বিএনপি নেতারা।
অবশ্য খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,‘লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী হসপিটাল আছে, সেখানে উনাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে, যা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরবর্তী কম্পেনসেটরি লিভার ডিজিজের জন্য টিপস করা হয়েছে।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘টিপসের কিছু টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্ট আছে, অ্যাডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখা হয় যে স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না; এই জিনিসগুলো তো আমরা করতে পারি নাই।’