শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যেভাবে গাজায় ‍যুদ্ধ থামাতে পারেন ট্রাম্প

যেভাবে গাজায় ‍যুদ্ধ থামাতে পারেন ট্রাম্প

স্বদেশ ডেস্ক:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ থামানো। বিশ্বজুড়েই চলছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার চেয়ে পরম মিত্র ইসরায়েলকে থামাকে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে ট্রাম্পকে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে হাজার হাজার রকেট ছুড়ে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪০০ জন। এরপর বছরের পর বছর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চালানো নিপীড়ন আরও জোরালো করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেদিনের পর থেকে চালানো সামরিক অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, আহত প্রায় এক লাখ। হতাহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এমন অবস্থায় সারা বিশ্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের দিকেই সবাই তাকিয়ে আছেন যে তার প্রশাসন কীভাবে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানানোর তালিকায় প্রথমদিকের একজন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনে অভিনন্দন!’

এর আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘হোয়াইট হাউজে এযাবৎকালে ইসরায়েলের সর্বোত্তম বন্ধু’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ট্রাম্প তার আগের মেয়াদে যে কয়েকটি কারণে ইসরায়েলিদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তার অন্যতম, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল। ইসরায়েল আগে থেকেই ওই চুক্তির ব্যাপক বিরোধিতা করে আসছিল। কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিগত অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতৈক্যকে পাশ কাটিয়ে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

তাই বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প ইসরায়েলের কাছের বন্ধু বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল প্রশ্নে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ ‘দৃষ্টান্তমূলক’ বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন। তিনি বলেন, ‘আশা করা যায়, তিনি আবারও সেই পথে হাঁটবেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কে এবং তার অবস্থান কী, সে ব্যাপারে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।’

ওরেন বলেন, প্রথমত, বিপুল অর্থ খরচ হয় বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ‘যুদ্ধ পছন্দ করেন না’। ট্রাম্প দ্রুত গাজা যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন ইসরায়েলকে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের ব্যাপারেও তার আপত্তি আছে। বসতির পরিসর আরও বাড়াতে ইসরায়েলি নেতাদের কারও কারও যে ইচ্ছা, সেটিরও বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্প।

দুইটি নীতিই নেতানিয়াহুর জোট সরকারের শরিকদের বিপক্ষে যায়। তারা ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেবে।

নেতানিয়াহুকে তার মার্কিন মিত্রের সাম্প্রতিক দাবি আর জোট শরিকদের দাবির মধ্য থেকে বেছে নিতে হলে তার শরিকদের দিকে ঝুঁকে যেতে হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার দূরত্ব দেখা গেছে।

মাইকেল ওরেন মনে করেন, ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের বেলায় নেতানিয়াহুকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোতে হবে। তিনি বলেন, ‘যদি জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনাকে এক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধের ইতি টানতে হবে,’ সেটার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে তাকে।’

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাথে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠা গাজায়ও এই একটিই চাওয়া এখন। ট্রাম্পের জয় মানে শিগগিরই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে, বলছিলেন মোহাম্মেদ দাউদ। গাজা সংঘাতে আটবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তিনি। গাজার আরেক বাস্তুুচ্যুত বাসিন্দা মামদুহ বলেন, কে জিতল তা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। তিনি চান কেউ একজন এগিয়ে আসুক। তিনি বলেন, ‘ওষুধ নেই, হাসপাতাল নেই, খাবার নেই। গাজায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’

মামদুহ বলেন, ‘আমরা চাই শক্তিশালী কেউ আসুক যে আমাদের এবং ইহুদিদের এখান থেকে আলাদা করতে পারবে।’

দখলকৃত পশ্চিমতীরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক সংশয় বিরাজ করছে। পশ্চিম তীর প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ) এর নিয়ন্ত্রণাধীন। সেখানকার অনেকের ধারণা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনই ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বন করে।

পিএ’র প্রধান অংশীদার ফাতাহ’র জ্যেষ্ঠ নেতা সাবরি সাইদামের মতে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের ওপর দিয়ে অথবা ইসরায়েলকে নিরন্তর সামরিক সহায়তার মধ্য দিয়ে কোনো রকম একটা সমাধানের চেষ্টা হলে সেটি সংকট আরও বাড়াবে। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা নতুন ট্রাম্পকে দেখতে চাই, অনেকটা ট্রাম্প টু পয়েন্ট ও, যিনি মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের মূল কারণের দিকে নজর দেবেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক হবেন।’

সাম্প্রতিক জরিপগুলো থেকে জানা যায়, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইসরায়েলি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরার প্রত্যাশায় ছিলেন। কিন্তু, তার অনিশ্চয়তায় ভরা ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে সতর্ক চোখ রাখা লোকেরও অভাব নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877