মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন

প্রভাবশালীদের আড্ডা বসত আজিজ ভাইয়ের বাসায়

প্রভাবশালীদের আড্ডা বসত আজিজ ভাইয়ের বাসায়

স্বদেশ ডেস্ক:

মাফিয়া ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় এত মদ কেন? এক যুগ ধরে তিনি দেশের বাইরে থাকলেও কারা এই মদের ভোক্তা? এসব নিয়ে প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। অনেকে বলছেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশে না থাকলেও তার সেবাভোগীদের ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাদের আপ্যায়নের জন্যই মদের ওই বিশাল মজুদ ছিল তার বাসায়।

এ দিকে, আলোচিত ব্যবসায়ী ও রহস্যময় চরিত্র আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল মাদক উদ্ধারের ঘটনায় আজিজের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

আলোচিত-সমালোচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাই কয়েক যুগ ধরেই মানুষের কাছে অতি পরিচিত। বাংলাদেশের মাফিয়া ডন হিসেবে তাকে অনেকেই চেনেন। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা, সালমান শাহের নিহতের ঘটনায় তার হাত রয়েছে বলে ব্যাপক আলোচিত তিনি। একসময় এ দেশের শোবিচ-জগৎ ছিল তারই নিয়ন্ত্রণে।

দেশী-বিদেশী অনেক নায়ক-নায়িকার লাইন পড়ে যেত তার বাসায়। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই তিনি অনেকটা আনসিন হয়ে যান। জানা যায়, ওই সময় তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান সিঙ্গাপুরে। তখন থেকেই তিনি থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরেই রয়েছেন।

১৯৯৭ সালে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। অভিযোগ রয়েছে, এক অনুষ্ঠানে সালমান শাহের স্ত্রী সামিরাকে আজিজ ভাই চুমু খেয়েছিলেন। সালমান শাহ তখন আজিজ ভাইকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মারেন। এর কয়েক দিন পরই রহস্যজনকভাবে মারা যান সালমান শাহ। যদিও সালমান শাহ হত্যার সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ ভাই।

সালমান শাহের মৃত্যুর দুই বছর পর ১৯৯৯ সালে খুন হন আরেক চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। যিনি একসময় নায়িকা দিতির স্বামী ছিলেন। এই হত্যায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সোহেল চৌধুরী হত্যার পর আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং বান্টি ইসলামকে গ্রেফতারও করা হয়। ডিশ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই খুনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে; কিন্তু আদালতে কিছুই প্রমাণ করা যায়নি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

এর আগে এরশাদের আমলে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন একবার। জানা যায়, এরশাদের প্রেমিকা মেরিকে নিয়ে আজিজ ভাইয়ের সাথে এরশাদের ঝামেলা হয়েছিল। এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই তিনি আজিজ ভাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

গত রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ওই বাসা থেকে বিপুল বিদেশী মদ, ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। মদের পাশাপাশি সিসা বারও পাওয়া যায় ওই বাড়ির ছাদে। বাসা থেকে এত মদের বোতল উদ্ধার হয় যে, খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকজনও হতবাক হয়ে যান। তারা এটিকে মদের কারখানা বলে উল্লেখ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে অনেক পুরনো মদ পাওয়া যায়। এসব মদ যত পুরনো হয় তত তার দাম বাড়ে।

প্রশ্ন জেগেছে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়ির এই মদের বারের গ্রহীতা কারা? আজিজ মোহাম্মদ ভাই গত এক যুগ ধরে দেশে নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাইল্যান্ডে থাকেন। মাঝে মধ্যে সিঙ্গাপুরেও থাকেন বলে জানা যায়। ওই দুই দেশে তার ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে। প্রশ্ন জেগেছে তার গুলশানের বাড়ির ক্যাসিনোতে কারা যেতেন?

একাধিক সূত্র বলছে, এই বাড়িতে থাইল্যান্ডে বসেই আজিজ ভাই ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ওখানে ক্যাসিনো খেলতে যেতেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে এসে ওই বাড়িতে ক্যাসিনো খেলতে যেতেন। তাদের আপ্যায়নের জন্যই দামি ব্র্যান্ডের ওই মদের মজুদ থাকত ওই বাড়িতে।

এ ছাড়াও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই বাড়িতে যেতেন মদ ও সিসা সেবনের জন্য। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের উপস্থিতি না থাকলেও তিনি অনেককেই নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকেই তিনি অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই বাড়িতে কারা যাতায়াত করতেন তা জানতে বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877