বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনার মিথ্যাচার গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

শেখ হাসিনার মিথ্যাচার গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

স্বদেশ ডেস্ক:

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা এত মিথ্যা বলেছেন, এমনভাবে বলেছেন, এমন কৌশল করে বলেছেন, তিনি নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি যা বলেন সেটাই সত্য, সেটাই বেদবাক্য। শেখ হাসিনা মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। তার মিথ্যাচার গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। গোয়েবলস বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো শেখ হাসিনার ছাত্র হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন।’

আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে জুলাই হত্যাকান্ডের দায় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে কার্যত এক ব্যক্তির শাসন কায়েম হয়েছিল। জাতীয় সংসদেও একক কর্তৃত্ববাদে পরিচালিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংক্রান্ত রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অপরাধ করেছে। যে অপরাধের সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তারা ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি না হলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, জুলাই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সিভিলিয়ান গোষ্ঠির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে যে হত্যা ঘটানো হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর মাধ্যমে বিচার করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইবুনাল পুন:র্গঠন করা হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়ার ট্রায়াল টেলিভিশনে দেখানোর ব্যাপারে আইনগত দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্তদের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হবে। যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই-আগস্টের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর গুলি চালিয়ে নজিরবিহীন হত্যাকান্ড বাংলাদেশে ইতিহাসে বড় কালো দাগ হয়ে থাকবে। পাঠ্যপুস্তকে রচিত হবে জুলাই বিপ্লবের এসব শহীদদের শোক গাঁথা। রক্ত পিপাসু জুলুমবাজ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের নির্মম চিত্র। তারা চেয়েছিল রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু মৃত্যুকে ভয় না পাওয়া ছাত্র জনতা যখন রাজধানী ঘিরে ফেললো এক কাপড়ে পালিয়ে গেল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদের মুখপাত্র হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে এ হত্যাকান্ডের জন্য প্রধানত দায়ী। তবে নির্বাচন কমিশন, র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবিসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর জনবিরোধী অবস্থানের কারণে জুলাই হত্যাকান্ডের ব্যাপকতা বেড়েছে। তাই জুলাই হত্যাকান্ডের দায় শেখ হাসিনাসহ দলীয় স্বৈরতন্ত্রের পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র সমানভাবে দায়ী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার প্রশাসনের বেশিরভাগ ব্যক্তিরাই এ হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারে না।

কিরণ আরও বলেন, নানা অন্যায় সুবিধা নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তৎকালীন প্রশাসনের আমলা, র‌্যাব-পুলিশ এই গণহত্যার নেপথ্যে খলনায়কের ভুমিকায় কাজ করেছে। আমি-ডামি নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করার মাধ্যমে যারা স্বৈরাচার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছিল, যারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানী ও আর্থিক খাতকে ধ্বংস করেছে, তারাও জুলাই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অনেক অপরাধী দেশে বিদেশে পালিয়ে রয়েছে, কেউ কেউ ধরা পড়েছে, আমলাদের অনেকেই এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে। এদের দ্রুত বিচার করা না হলে শহীদদের আত্মার সাথে বেঈমানী করা হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ছাত্র জনতার এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। দেশ সংকটের মুখোমুখি হবে। ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই জুলাই হত্যাকান্ডের দোসরদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।

জুলাই হত্যাকান্ডে দায়ীদের উপযুক্ত বিচারের লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী নিম্নে ১০ দফা সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো-

১. জুলাই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা, গুলিবর্ষণকারীসহ হত্যাকান্ডে জড়িত রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকা প্রস্তুত করা।

২. শেখ হাসিনাসহ যারা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা। জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত যারা ভারতে অবস্থান করছে তাদের বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩. গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করে গণহত্যার তথ্যচিত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই তথ্যচিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করে একটি কমিটি করা। যে তথ্যচিত্র বিচার প্রক্রিয়ার কার্যক্রমে সহায়তা করবে।

৪. জুলাই হত্যাকান্ডে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরি করে তাদের পরিবারকে নগদ আর্থিক সহযোগিতা, প্রয়োজন অনুযায়ী আবাসন ব্যবস্থা, আহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রদান, পরিবারের উপযুক্ত ব্যক্তিদের চাকুরির ব্যবস্থা করাসহ স্থায়ীভাবে মাসিক ভিত্তিতে ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৫. জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে পারার নৈতিক অধিকার রাখে কি না তা নিয়ে গণভোটের উদ্যোগ নেয়া।

৬. জুলাই গণহত্যার অভিযোগে ঢালাওভাবে মামলা প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি প্রদানে বাধা তৈরি করতে পারে। তাই গণহত্যায় অভিযুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া। তা নাহলে অন্তর্বতীর্ সরকারের ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

৭. বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিবাদী পক্ষকে সকল আইনী সুবিধা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা।

৮. নিহত অনেককে পোস্ট মর্টেম ছাড়া দাফন করতে হয়েছে। এ বিষয়ে কি করা যায় তার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৯. পতিত সরকারের সহযোগিতাকারী আইন, বিচার ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা এবং

১০. কোন মামলাগুলো দেশিয় আদালতে বিচার হবে আর কোন মামলাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার করা হবে তার দিক নির্দেশনা প্রদান করা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “জুলাই হত্যাকান্ডে দলীয় স্বৈরতন্ত্র অপেক্ষা প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্রই বেশি দায়ী” শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইষ্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877