বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে

বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে

 স্বদেশ ডেস্ক:

রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের একটা অংশ প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে চলে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাতের জন্য গভীর সঙ্কট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্রেতা এবং বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারায় তাদের একটি ক্রেতার নব্বই শতাংশ ক্রয়াদেশ ভারতে চলে গেছে। ‘নো এক্সিট’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে তবেই ক্রেতারা আবার ফিরতে পারেন।

‘আমার অনেকগুলো অর্ডার ইন্ডিয়াতে প্লেস হয়ে গেছে। যে কাস্টমার আমার এখানেই কাজ করতো তার অর্ডারগুলো সে ইন্ডিয়াতে প্লেস করেছে শিপমেন্ট ও ডেলিভারি ইস্যুর কারণে। আমরা যদি পরিস্থিতি উন্নয়ন করতে পারি ক্রেতারা আবার ফিরে আসবে।’

বাংলাদেশের বড় বড় পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে এমন অঞ্চলের মধ্যে আশুলিয়া, সাভার এবং গাজীপুর এলাকায় সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। শ্রমিক অসন্তোষ এবং উত্তেজনার এক পর্যায়ে যৌথবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

ক্রমাগত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলা হলেও সেটি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়, সেটি স্পষ্ট। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বর্তমান পরিস্থিতিকে পোশাক খাতের জন্য একটা বড় ধাক্কা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘১২ থেকে ১৫ দিন প্রচুর ফ্যাক্টরি বন্ধ থেকেছে। একেবারে বন্ধ। কেউ কেউ আবার ধরেন দুপুর পর্যন্ত চালাতে পেরেছে, এরপর পারেননি। এগুলোতো পুরাটাই লস। আর এর চাইতে বড় লস যেটা হচ্ছে, সেটা হলো আমাদের যারা ক্রেতা তারা তো সরে যাচ্ছেন। তারা বলছেন যে আমরা তোমাদের সাথে আছি, বাংলাদেশকে লাগবে, সবই বলছেন। কিন্তু আমরা তো এটার বাস্তবতাটা জানি। বাস্তবতাটা হলো অন্তত শতকরা ২৫-৩০ ভাগ অর্ডার ডিসেম্বরের মধ্যে সরে যাবে। এবং বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে, ক্যাম্বোডিয়া যাচ্ছে, ভিয়েতনামে যাচ্ছে, ভারতে যাচ্ছে, পাকিস্তানে যাচ্ছে, এমনকি মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে।’

পোশাক খাতের সমস্যা তুলে ধরা নিয়ে একটি সঙ্কট রয়েছে বলেও মনে করেন রুবানা হক।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘যখন আপনি সাহস করে কোনো একটা সত্যি কথা বলতে যাবেন, নানা দিক থেকে নানাভাবে আপনার ওপরে সবাই চড়াও হবে। এবং বলবে যে এটা না বললেই পারতেন। কিন্তু এটা না বললেও কিন্তু ক্রেতারা জানেন যে ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হচ্ছে। কাজেই সহজভাবে স্বচ্ছভাবে আমাদের সমস্যাগুলো যদি আমরা তুলে ধরতে পারি এবং বোঝাতে পারি যে এর পেছনে আরো অনেক কিছু কাজ করছে, তাহলে সবাই মিলে কিন্তু সমবেতভাবে একটা সমাধানের দিকে যাওয়া যায়।’

শ্রমিক অসন্তোষ কেন
সরকার পতনের পর বাংলাদেশে পোশাক খাতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আশুলিয়া, সাভার এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কারখানা বন্ধ থাকায় একটা বড় সময় ব্যহত হয়েছে উৎপাদন। সময়মতো পাঠানো যায়নি পণ্য যার বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই।

বাংলাদেশে পোশাক খাতে অস্থিরতার একাধিক কারণ সামনে আসছে। এর মধ্যে ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মালিকানার সমস্যা, বকেয়া পাওনা, কিছু ক্ষেত্রে বহিরাগতদের উসকানি এবং শ্রমিকদের নতুন কিছু দাবি দাওয়া এর পেছনে কাজ করেছে।

আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক সংগঠনের একজন নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আগের সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের ফ্যাক্টরিতে যেমন সমস্যা হয়েছে, তেমনি ৫ আগস্টের পর সুযোগ পেয়ে শ্রমিকরাও নানা দাবি নিয়ে মাঠে নামে।

‘এ আন্দোলনটা শুরু হয় নারী-পুরুষ সমহারে চাকরির দাবিতে। আপনারা জানেন যে ৩০টার বেশি দাবি আসছে। একেক কারখানার একেক দাবি।’

বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার মনে করেন, শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির নেপথ্যে বহিরাগত একটা প্রভাব কাজ করেছে।

‘ঝুট ব্যবসা নিয়ে একটা সমস্যা- আগে যারা ছিল তাদের জায়গায় নতুন লোকজন এই ব্যবসা নিতে চায়। এছাড়া কিছু বহিরাগত সমস্যা ছিল। আর আন্তর্জাতিক কিছুটা চাপ থাকেই। যারা চায় আমাদের দেশ থেকে এই শিল্পটা আরেক দেশে যেন চলে যায়।’

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে ১৮ দফা চুক্তি হয়েছে। সব কারখানায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এটাও একটা কারণ। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, অবিলম্বে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

‘মালিক, ঝুট ব্যবসায়ী যারা এলাকায় ষড়যন্ত্র করছে, তারা যেন সেটা বন্ধ করে। সেই কথাটাই আমরা জোর দিয়ে বলছি যে ১৮ দফার চুক্তি হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন যেন দ্রুত করে। সবগুলো ফ্যাক্টরিতেই যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।’

মালিক পক্ষের দিক থেকেও এই অস্থিরতার পেছনে বাইরের ইন্ধন বা একটা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতে অস্থিরতার মূল কারণ খতিয়ে দেখতে হবে সরকারকে।

তিনি বলেন, ‘একেবারে নিঃসন্দেহে বাইরের ইন্ধন আছে এবং এর পেছনে কেউ না কেউ কাজ করছে। এখন এই শর্ষের ভূতটা কে, এটাতো বের করতে পারা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ আমরা শুধু শ্রমিক-মালিক সম্পর্কটা দেখতে পারি, এর পেছনে কাজ করতে পারি, নিজের ফ্যাক্টরিতে যেতে পারি কথা বলতে পারি। কিন্তু বাইরে কে আছে এটাতো দেখতে পারব না। এটি সরকারকে দেখতে হবে।’

সঙ্কট দীর্ঘায়িত এবং জটিল হওয়ার পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘাটতি ও সমন্বয়হীনতা একটা কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। সরকার পতনের পর পুলিশ একটা বড় সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে গেছে। শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা মিলিয়ে যেভাবে সমন্বিতভাবে তৎপরতা চালাতো সেখানে একধরনের ঘাটতি দেখা দেয়। এখনো শিল্প পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে আশুলিয়া সাভার এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে।

বিজিএমইএ কী বলছে
সরকার পতনের পর বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএর নেতৃস্থানীয় অনেকেই নিরুদ্দেশ। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল্লাহ হিল রাকিব।

পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এতদিন অনেকেই প্রকাশ করতে পারেনি। যার যত পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এখন প্রকাশ করছে।

‘আমি বলব যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ের স্কোপ রয়ে গেছে। স্বদিচ্ছা সবারই আছে। চেষ্টা করছে। আর্মি ইজ গিভিং দেয়ার বেস্ট। এখানে আসলে উচিত সরকারকে আরো একটু কঠোর ভূমিকা পালন করা। আমরা কথা বলছি, তারাও হয়তো চেষ্টা করছেন।’

পোশাক খাতে অস্থিরতার প্রভাব সম্পর্কে আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, এটার তো একটা ইকনোমিক লস আছেই। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।

‘ডিরেক্ট ইমপ্যাক্ট হচ্ছে এই অর্ডারগুলো যেগুলো বিলম্ব হচ্ছে, সেগুলো এয়ার শিপমেন্ট করতে হবে, ডিসকাউন্ট দিতে হবে, কাস্টমারের ক্ষতি হবে। আর ইনডিরেক্ট ইমপ্যাক্ট হচ্ছে এই যে নিউজটা এটা কাস্টমারের মাইন্ডসেট বা ডিসিশনে চেঞ্জ আনতে পারে। ব্র্যান্ডেড কাস্টমারদের সাথে আমরা কথা বলছি। তারা সবাই আমাদের কনফিডেন্স দিচ্ছেন, এখন পর্যন্ত কিন্তু এটা কতদিন থাকবে জানি না।”

বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এও মনে করেন যে বর্তমানে যেসব কারখানা আক্রান্ত আছে সেটা সংখ্যা বিবেচনায় নগণ্য।

‘এটাও সত্য যে এটা আসলে এক পার্সেন্টেরও কম, আমাদের টোট্যাল নাম্বারের তুলনায়।’

তবে পোশাক খাতের অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন প্রকৃত সঙ্কট আরো গভীর। এছাড়া সংগঠনের ভূমিকা নিয়েও কারো কারো প্রশ্ন রয়েছে।

এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, “আমাদের সাধারণ সদস্যরাই মনে করেন যে বিজিএমইএ সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আপনি যদি দু’সপ্তাহ আগের অবস্থা দেখেন আর এখনকার সিচুয়েশন, অনেক উন্নতি হয়েছে। যত দ্রুত আমরা এই সিচ্যুয়েশনটা ডিল করতে পারব, তত দ্রুত কাস্টমারদের কনফিডেন্স লেভেল ব্যাক করবে।”

শ্রম মন্ত্রণালয় কী বলছে
বাস্তবতা প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারখানায় মজুরি বকেয়া, ছাঁটাইসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঝামেলা লেগেই আছে। সরকার এখন কারখানাভিত্তিক সমস্যা ধরে সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে। যৌথবাহিনীর আশুলিয়া সাভার এলাকায় বেশ তৎপর হয়েছে। কোথাও কোনো কারখানায় সমস্যা হলে গিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছে।

পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের শান্ত রাখতে শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং মালিক-শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের তৎপরতার মূল বার্তা হলো কোনোভাবেই শ্রমিক অসন্তোষ যেন বড় না হয়। ছড়িয়ে না পড়ে।

শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। ১৮ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেসব কারখানায় বকেয়া বেতন রয়েছে, সেখানে প্রয়োজনে সরকার ঋণ দিয়ে বেতন ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা নিচ্ছে।

‘সর্বোচ্চ কনসালটেশনের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। এবং সমাধান করে আসছি। ঝুট ব্যবসা নিয়েও আমরা কাজ করছি, কিভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটাকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সহিংসতা সেখানে হয়, প্রতিবারই ট্রানজিশনের সময়, সেটাকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তো সার্বিক বিষয়টাকে আমরা এড্রেস করছি। আর নিরাপত্তার বিষয়টা সময়ের সাথে সাথে আরো উন্নতি করবে। এখন বিজনেসম্যানরা মোটামুটি একটা কনফিডেন্সে এসেছে যে নিরাপত্তাটা আমরা দেয়ার চেষ্টা করছি।’

পোশাক খাতে অস্থিরতা নিরসন না হলে এর প্রভাব পড়বে দীর্ঘমেয়াদে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বিবিসি বাংলাকে বলেন, মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটিয়ে দ্রুত এই অস্থিরতা নিরসন জরুরি।

‘আমাদের আসলে ক্ষতি অনেক বড়ই বলতে হবে। ক্ষতি এই অর্থে যে আমাদের তো শুধু কারখানার অর্ডার এবং শ্রমিকের মজুরি না, এই মুহূর্তে আমাদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- রফতানি ও রেমিট্যান্স। সেদিক থেকে আমাদের জন্য কারখানা পর্যায়ে স্থিতিশীলতা ফিরে আসা, এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। এ অবস্থান ধরে রাখা এবং প্রবৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য শ্রমিক অসন্তোষের স্থায়ী সমাধানে কাজ করা এবং দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই, একথা সবাই বলছেন।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877