বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কর্মদিবসে কেমন ছিল সচিবালয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কর্মদিবসে কেমন ছিল সচিবালয়

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সচিবালয়ের প্রথম কার্যদিবসে ছিল খানিকটা ভিন্ন চেহারা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রোববার সচিবালয়ে নতুন সরকারের উপদেষ্টারা প্রথম নিজ নিজ দফতরে অফিস করেন।

সচরাচর সচিবালয়ে প্রবেশদ্বারে পুলিশের যে কড়া নিরাপত্তা প্রহরা এবং ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়, রোববার সেটি দেখা যায়নি।

এদিন ইউনিফর্ম পরিহিত কোনো পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। মূলত সিভিল ড্রেস বা সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যদের সচিবালয়ে রুটিন দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। অবশ্য ইউনিফর্ম পরিহিত এপিবিএন সদস্যরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে।

রোববার উপদেষ্টারা সচিবালয়ে নিজ নিজ দফতরে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিত হন এবং মতবিনিময় করেন। উপদেষ্টারা বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তাদের প্রত্যাশার জায়গা তুলে ধরেন। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়গুলো তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন উপদেষ্টাদের।

যেসব মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টারা দ্বায়িত্ব পেয়েছেন সেগুলো ছাড়া বাকি মন্ত্রণালয়গুলোতে গিয়ে দেখা যায় এক ধরনের শূন্যতা। সকালের দিকে এসব মন্ত্রণালয় ঘুরে অনেক কক্ষ খালি থাকতে দেখা গেছে। সবমিলিয়ে পরিবর্তন ছুয়ে গেছে মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ এবং কর্মকাণ্ডে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিজেদের বদলি এবং নতুন পদায়ন নিয়ে কর্মকর্তাদের কারো কারো চেহারা ছিল বিমর্ষ। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পদবঞ্চিতদের মধ্যে পদোন্নতির আশা এবং দৌঁড়ঝাপ ছিল বলেও মনে হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের অনেকে বলাবলি করেন যে এমনও কর্মকর্তা আছেন যারা দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তি ভোগ করছিলেন তারাও এখন নিজেদের বঞ্চিত হিসেবে উপস্থাপন করে সুবিধা নিতে চাইছেন।

দুই ছাত্র উপদেষ্টা নিয়ে আগ্রহ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার উপস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিক এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা বিশেষ আগ্রহ ছিল। দু’জনের মধ্যে প্রথমে সচিবালয়ে আসেন নাহিদ ইসলাম।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নাহিদ ইসলাম সরকারি গাড়িতে সাড়ে ৯টার দিকে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। খুব সাদামাটাভাবে তিনি চেক শার্ট পরে চামড়ার স্যান্ডেল পায়ে প্রথম দিন অফিস করতে আসেন।

সাংবাদিকদের সাথে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিয়ে তাদের আন্দোলনের সূচনা এবং তার ধারাবাহিকতায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন হয়েছে। মেধাভিত্তিক প্রশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা জানিয়ে নাহিদ ইসলামের আশাবাদ- জনগণ যে আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠিয়েছে সেটি তারা পূরণ করতে সক্ষম হবেন।

একই সাথে আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে যে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল সেটির বিষয়ে তদন্ত করা এবং এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই হবে তার প্রথম কাজ।

মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিয়মকালেও নাহিদ ইন্টারনেটের ধীর গতি নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন হাজির করার নির্দেশনা দেন।

অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ অফিসে ঢুকেই বৈঠক করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তাদের সাথে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ নারী বিশ্বকাপের ভেন্যু হওয়ার বিষয়টি হুমকির মুখে রয়েছে বলে তিনি জানান।

আসিফ মাহমুদ জানান, প্রথম দিনে তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এর মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইন্সস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন ইন্সস্টিটিউট নাম দেয়া, নারী বিশ্বকাপের ভেন্যুর ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা এবং আইনের মধ্যে থেকে বিসিবির সভাপতির অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন কাউকে নিয়োগ করা যায় কিনা সে বিষয়ে বোর্ড পরিচালকদের পরামর্শ দেয়া হয়।

অন্যদিকে এ সরকার কত দিনের হবে এমন একটি প্রশ্নে আসিফ জানান, ‘আমরা পুরো দেশকে ঢেলে সাজাতে চাই। বাংলাদেশের জনগণের একটি স্বতস্ফুর্ত গণঅভ্যুত্থানের এবং সংস্কারের দাবিতে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা সে দায়িত্ব পালন করব। আমাদের যত দিন দরকার তত দিনই থাকব এ দায়িত্ব পালন করার জন্য। তবে আমাদের যারা আছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে, আমাদের ক্ষমতা ধরে রাখার বা ক্ষমতায় থাকার অভিলাষটা নেই।’

স্বরাষ্ট্রে বিশেষ আগ্রহ
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনকে ঘিরে একটা বিশেষ আগ্রহ ছিল সচিবালয়ে। এদিন তিনি সুরক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।

দুপুরে সচিবালয়ে উপস্থিত হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মুখে উপদেষ্টাকে এপিবিএন গার্ড অফ অনার প্রদান করে।

এদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের কাজে যোগদানের বিষয়ে বৃহস্পতিবার শেষ সময়সীমার কথা জানিয়ে দেন।

এছাড়া রাজনীতি করতে হলে এবং দল করতে হলে একটি আইন করে সেই আইনের আওতায় করতে হবে বলেও ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান, পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট প্রণয়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে কথাবার্তা শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ‘পলিটিক্স করতে হলে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্টের মধ্যে করতে হবে। সেটা আপনাদের পছন্দ হয় না হয় আমি যত দিন পর্যন্ত আছি আমি এটা করে ছাড়ব। পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্টের মধ্যে যদি থাকেন তাহলে পলিটিক্স করতে পারবেন না হলে পারবেন না। সোজা কথা।’

এছাড়া সরকার পতনের পর নতুন করে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করেন সাখাওয়াৎ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘একটা পলিটিক্যাল পার্টির অবস্থা আজকে দেখেন। এত বড় একটা দল, এত ঐতিহ্যবাহী একটা দল, যার নামের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জড়িত আজকে তাদের মেম্বারদেরকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাদের জায়গায় যদি আপনি মনে করেন আমি আসলাম দখল করব, বাজার দখল করব, ঘাট দখল করব, চাঁদাবাজি করব, কিছু দিন করেন। কিন্তু আমি সেনাপ্রধানকে বলেছি, রিকোয়েস্ট করেছি পা ভেঙে দিতে আপনাদের। আই ডোন্ট কেয়ার ইউ গো টু হেল।’

রোববার নতুন সরকারের প্রথম দিনে অন্যান্য উপদেষ্টারা স্ব স্ব দফতরে অফিস করেছেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পরিবেশের ন্যায় প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্য ঠিক করে এগুতে চান তিনি।

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘কাজ করতে চাই। যে পরিবর্তনের কথা বলেছি সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

আর প্রথম কর্মদিবসে মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, ‘বাংলাদেশের মানুষের ইলিশের চাহিদা পূরণ করেই বিদেশে রফতানি করা হবে।’
সূত্র : বিবিসি


দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877