স্বদেশ ডেস্ক: প্রায় ৯ বছর পর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের। আর সংগঠনটির ঢাকা মহানগর কমিটির সম্মেলন হতে যাচ্ছে ১৩ বছর পর। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নেতৃত্বের পালাবদলের এই সম্মেলন ঘিরে নেতাকার্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ক্যাসিনো-কান্ডে বিতর্কিত অনেক নেতাই বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে ত্যাগী নেতারা আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মাঠ পর্যায়ে। ত্যাগী, যোগ্য ও বিতর্কিত নয়Ñএমন নেতৃত্ব নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি গঠিত হোক এমন প্রত্যাশা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।
আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন। সবশেষ ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পান মোল্লা আবু কাওছার আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ। কাক্সিক্ষত পদ পেতে এরই মধ্যে নিজেদের মেলে ধরতে নেতাকর্মীদের কাছে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা পদপ্রত্যাশা করছেন। তারা নিজেরাও চান সংগঠনের নেতৃত্বে গুরুদায়িত্ব যে-ই পান, তিনি যেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির হয়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ পরপর দুই বার একই দায়িত্ব পালন করছেন। তাই নেতাকর্মীদের ধারণা শীর্ষ দুই পদেই এবারের কাউন্সিলে পরিবর্তন আসবে। এবার শীর্ষ দুই পদের জন্য যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন যথাক্রমে: স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ, সহ-সভাপতি মঈন উদ্দীন মঈন, আফজালুর রহমান বাবু। এর মাঝে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্মল রঞ্জন গুহ ’৯০-এর ছাত্র আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। এছাড়াও তিনি দেবেন্দ্র কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু এগিয়ে। সাচ্চু ১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৫ সাল থেকেই পালন করেছেন বিভিন্ন গুরু দায়িত্ব। যার মাঝে রয়েছে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক, বৃহত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগের দুই বারের সভাপতি, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ (উত্তর) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই বারের সহ-সভাপতি, দুই দফা দায়িত্ব পালন করেছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির। এছাড়াও কয়েক দফায় দায়িত্ব পালন করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে থেকেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে কলকাতায় ৪৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রেনেডের স্প্রিন্টার। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বার বার গ্রেফতার ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দীর্ঘদিন যাবৎ কারাবরণ করেন। দুই শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন আরও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তাদের তিনজনই স্বেচ্ছাসেবক লীগ বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা হলেন—ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। এই তিনজনই অন্য প্রার্থীদের তুলনায় বয়সে নবীন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, দুর্নীতির সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের নাম আসায় অঙ্গ সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনার প্রক্রিয়া খুব বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যাবে। স্বেচ্ছাসেবকলীগের শীর্ষ পদে যারা আসতে চান শিগগিরই তাদের বায়োডাটা জমা দিতে বলা হবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন এটি। সম্মেলনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানাতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, ইতোমধ্যে সম্মেলন উপলক্ষে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৬ অক্টোরর বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সারা দেশের জেলা ও মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আসবেন। সম্মেলন কিভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা হবে এ বিষয়ে সবার পরামর্শ নেওয়া হবে।