কাতালোনিয়া বিতর্কে উত্তাল বার্সেলোনা। যার রেশ পড়তে পারে এল ক্লাসিকো ম্যাচের উপর। পরিস্থিতি এমন যে ২৬ অক্টোবর বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচ কাম্প নৌ থেকে সরিয়ে সান্তিয়াগো বের্নাবৌয়ে আয়োজন করার অনুরোধ জানিয়ে স্প্যানিশ ফেডারেশনকে চিঠি পাঠিয়েছেন লা লিগা কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা। বার্সেলোনার রাজনৈতিক ঝামেলার রেশ পড়তে পারে লা লিগার উপরেও। বার্সেলোনা বিমানবন্দর থেকে অনেক বিমান চলছে না। ফলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ভরসা বাস বা ট্রেন। যা পরিস্থিতি, তাতে সপ্তাহান্তে এইবারের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য মেসিদের প্রায় ৩৮০ মাইল বাসে যেতে হতে পারে। ছ’ঘণ্টার এই বাস যাত্রা নিয়ে বার্সেলোনার ফুটবলাররাও শঙ্কিত।
ঘটনা হল, ২০১৭ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও এখনও স্পেন-কাতালোনিয়া দ্বন্দ্ব কমেনি। দু’বছর পর ফের বিক্ষোভ চরম মাত্রা নিয়েছে। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পিছনে মূল ভূমিকা ছিল এমন ৯ রাজনৈতিক নেতাকে চলতি সপ্তাহে নয় থেকে তেরো বছরের জেল খাটার নির্দেশ দিয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন। চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকেই বার্সেলোনার বিমানবন্দর বন্ধ করতে হয়েছিল। আবারও তা বন্ধ। গত দু’দিন ধরে দেশের নানা প্রান্তে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। কাতালান বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের শাস্তির প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছে। এইবারের বিরুদ্ধে খেলতে মেসিরা পুরো রাস্তা বাসে না যেতে পারলেও বার্সেলোনা থেকে বিমানে বাস্কে কাউন্টি পর্যন্ত যেতে পারতেন। তার পর সেখান থেকে বিলবাও পর্যন্ত বাসে। কিন্তু, বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় সেটা হচ্ছে না। ফলে ৩৭৯ মাইলের রাস্তা বাসে যেতে হতে পারে মেসিদের। ন’বছর আগে বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটি ম্যাচে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। আইসল্যান্ডের এক আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে ইউরোপের অনেক দেশের আকাশ ঢেকে গিয়েছিল তখন। ফলে বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। বার্সেলোনা থেকে ফুটবলারদের বাসে মিলান যেতে হয়েছিল। সে বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ইন্তার মিলানের কাছে ১-৩ হারতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১৮ অক্টোবর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা। প্রায় শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল। এমনকী সড়কপথেও যানবাহন চলাচল ছিল বন্ধ। এই ঘটনার জেরে, ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ইউরো বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলার পর বার্সেলোনায় ফেরা মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে পায়ে হেঁটে। এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই, বরং তা আরও জটিল হতে পারে। এক বিবৃতিতে কাতালান সমর্থকেরা বলেছেন, ‘স্বাধীনতা ঘোষণার সময়ও যেমন নেতাদের জেলে পাঠিয়ে কোনও লাভ যায়নি, এবারও তেমন কিছুই হবে। কারণ, বিরোধীদের জেলে পাঠানো কোনও সমাধান হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রতি পূর্ণ মর্যাদা রেখেই বলতে হচ্ছে, নেতাদের মত প্রকাশের সুযোগ করে দিন। একসঙ্গে আলোচনা করে কাতালোনিয়া সমস্যার নিষ্পত্তি সম্ভব। সে জন্য আটক করা নেতাদের মুক্তিও দেওয়া উচিত।’ এরই মধ্যে, কাতালোনিয়া সমর্থকরা ২৬ অক্টোবর, এল ক্লাসিকোর দিন শহর জুড়ে মিছিল করার ঘোষণাও করেছেন। এ জন্যই এল ক্লাসিকোর ভেন্যু বদলের ভাবনা।