রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

মহান বিজয় দিবস আজ

স্বদেশ ডেস্ক:

আজ ১৬ ডিসেম্বর, এক অবিস্মরণীয় বীরত্বগাঁথা গৌরবময় দিন। মহান বিজয় দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২ বছর পেরিয়ে ৫৩তে পদার্পণের দিন আজ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দেশ হিসেবে জানান দেয়ার দিন আজ। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে মুক্তিকামী মানুষ ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জন করেছিল বিজয়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের পর বাংলার মানুষ এই দিনটি বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছিল। গণতন্ত্রের চেতনা স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছিল আজকের এই দিনে। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ আর সীমাহীন কষ্টের প্রহর কেটে নতুন সূর্যোদয় ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের এই দিনটি উদযাপনের জন্য আজকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সাথে স্মরণ করবে সেই সব শহীদকে, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা। স্মরণ করবে সেইসব বীর সেনানীকে যারা শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। যেসব নর-নারীর সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সম্মান জানাবে পুরো জাতি।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শাসক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বুটের তলায় স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর এক অপারেশনে নামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ ছেড়ে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নেয় সমাধানের উপায় হিসেবে। যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় পুরো জাতির ওপর। নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে ওঠে অস্ত্রের জোরে বলীয়ান সামরিক শাসকগোষ্ঠী। শুরু হয় মুক্তির লড়াই, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ।

ব্রিটিশের বিদায়ের পর নতুন রূপে এ জাতির ওপর শোষক হিসেবে আবির্ভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকশ্রেণী। যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ একদিন পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে আন্দোলন করে একটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল সেই বাংলার জনগণকেই আবার অস্ত্র ধরতে হয় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। আগে থেকে শাসকগোষ্ঠীর হঠকারিতা, অদূরদর্শিতা এবং অবিমৃশ্যকারিতার কারণে দুই অঞ্চলের মধ্যে তৈরি হয় বিভেদরেখা এবং বৈষম্যের বেড়াজাল। পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শোষণ আর অবহেলা চরম আকার ধারণ করলে প্রতিবাদে ক্রমে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে এ অঞ্চল। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে বুটের তলায় তা পিষ্ট করার নীতি গ্রহণ করে পশ্চিমের শাসকগোষ্ঠী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহনা শুরু করে শাসকগোষ্ঠী।

ফলে ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ `এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার` স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানি শাসকচক্র আমাদের মুক্তির স্পৃহাকে দমনের পথ বেছে নেয়। তারা রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মাধ্যমে জন্ম দেয় ২৫ মার্চের কালরাত্রি। এরপরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের পৃথক পথচলার যাত্রা। ওদের সাথে আর নয়। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াই। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিসংগ্রামের পর পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৯১ হাজার ৪৯৮ জন নিয়মিত-অনিয়মিত এবং আধা সামরিক সৈন্য নিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে। পৃথিবীর মানচিত্রে সার্বভৌম নতুন জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877