শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

তুরস্কের অভিযানের আশঙ্কায় সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরু

তুরস্কের অভিযানের আশঙ্কায় সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরু

স্বদেশ ডেস্ক:

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আসন্ন তুরস্কের সামরিক অভিযানকে সামনে রেখে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিগগিরই তুরস্ক সামরিক অভিযান চালাবে। কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে তুরস্কের এ অভিযানে সমর্থন না দিলেও অংশগ্রহণ কিংবা হস্তক্ষেপ করা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ দিকে তুরস্কের অভিযানের বিষয়ে কুর্দি যোদ্ধারা বলছে যে, এ ধরনের পদক্ষেপ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্তের (আইএসআইএল বা আইএসআইএস) বিরুদ্ধে পাওয়া বিজয়ের ফলকে নস্যাৎ করে দেবে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি স্টিফেন গ্রিশাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে আঙ্কারার এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে না, এমনকি অংশগ্রহণ কিংবা হস্তক্ষেপও করা হবে না।

তবে এটি স্পষ্ট নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর সিরিয়া থেকে এক হাজার না কি পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ফোনালাপের পর ওই বিবৃতি দেয়া হয়। এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী গতকাল সোমবার তুরস্কের সীমান্তবর্তী উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার তেল আবইয়াদ ও রাস আল আইন থেকে দু’টি পর্যবেক্ষণ ঘাঁটি সরিয়ে নিয়েছে। এই অঞ্চলের অন্যান্য মার্কিন সেনা এখনো অবস্থান করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

আইএসআইএলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দি ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের শক্ত পৃষ্ঠপোষক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এক বছর আগে কুর্দি ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের সহায়তায় সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করে মার্কিন বাহিনী। এর আগে দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল আইএসের দখলে ছিল। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় সিরিয়ার উত্তর থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত দেশটিতে মার্কিন নীতির একটি বড় ধরনের পরিবর্তন। গতকাল সোমবার এরদোগান বলেছেন, মার্কিন ঘোষণার পর যেকোনো মুহূর্তে সিরিয়ায় কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে প্রস্তুত তার সেনাবাহিনী।

টেলিভিশনে করা ওই মন্তব্যে এরদোগান বলেন, আমরা কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই যেকোনো রাতে অভিযান চালাতে পারি। এই সন্ত্রাসী দলটির (ওয়াইপিজি) হুমকি আর সহ্য করার প্রশ্নই আসে না। এ দিকে সিরিয়ার কুর্দিরাও সোমবার সতর্ক করে বলেছে যে, তুরস্কের সামরিক অভিযানে অঞ্চলটিতে আইএসের পুনরুত্থান ঘটাবে এটা নিশ্চিত। তারা তুরস্কের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধেরও অঙ্গীকার করেছে।

সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের অভিযান আইএসের আত্মগোপনে থাকা কিছু নেতাদের পুনর্গঠিত হতে সাহায্য করবে এবং দলটিকে (আইএস) পরাজিত করার সাফল্যকে ম্লান করে দেবে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন এ বাহিনী সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ওয়াশিংটনের নিন্দা করেছে। এসডিএফ জানিয়েছে, ‘মার্কিন বাহিনী তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি এবং তুরস্কের সাথে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে তাদের বাহিনী সরিয়ে নিয়েছে। তুরস্ক এখন উত্তর ও পূর্ব সিরিয়ায় অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ সিরিয়ান-কুর্দিশ বাহিনী জানিয়েছে, তুরস্কের সেনাদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করব না। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের ১১ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে এসডিএফ।

এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেছেন, সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। সোমবার এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। টুইটারে দেয়া পোস্টে কালিন বলেন, সীমান্ত এলাকাটিতে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে এ অভিযানের প্রয়োজন রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে এমন বিবৃতি আসার পর অঞ্চলটির যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা এতে কুর্দিদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। দীর্ঘদিন থেকেই অঞ্চলটিতে এ বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছিল ওয়াশিংটন।

রোববারের হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে বন্দী বিদেশী যোদ্ধাদের নিজেদের হেফাজতে নেবে তুরস্ক। সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যেই সিরিয়া সীমান্তে তুরস্কের সাঁজোয়া যান মোতায়েনের ছবি ও ভিডিও তুর্কি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। এরদোগান ওই অভিযানের ঘোষণা দেয়ার পরই এ প্রস্তুতি শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তুর্কি-সিরিয়া সীমান্ত এলাকার সুরক্ষায় কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। সূত্র : আলজাজিরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877