শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

সমাধান হয়ে যাচ্ছে ভারতের ইস্যুগুলো, পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার

সমাধান হয়ে যাচ্ছে ভারতের ইস্যুগুলো, পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো একে একে সমাধান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে থাকা ইস্যুগুলো পিছিয়ে পড়ছে, সুরাহা হচ্ছে না। ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক এই পরিস্থিতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত দিল্লি সফরে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে ভারত। সীমান্তের ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে ত্রিপুরার সাবরুমে সরবরাহ করতে পারবে প্রতিবেশী দেশটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) সরবরাহ যাবে ভারতে। এসব বিষয়ে সই করা চুক্তিগুলো ভারতের স্বার্থের অনুকূলেই গেছে।

অন্য দিকে বাংলাদেশের বহুলপ্রত্যাশিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এই সফরে হয়নি। ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে তিস্তা নিয়ে যে অনুচ্ছেদ ছিল, সদ্যসমাপ্ত সফরের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে তার বাইরে কিছু যোগ হয়নি। আগের সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতে মোদি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘দুই দেশের বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে।’ এরপর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। ভারতেও জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আবারো ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তিস্তা নিয়ে আলোচনা অগ্রসর হয়নি।

আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছেন, এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও একই ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন মোদি। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টির উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক। সাধারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছে ভারতের স্বার্থরক্ষাকারী ইস্যুগুলোর সমাধান হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর সুরাহা হচ্ছে না। এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ দূর করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যৌথ বিবৃতিতে আসা প্রয়োজন ছিল। তাহলে এটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেত।

তিনি বলেন, এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই- এমন কথা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সাধারণ মানুষ এতে আশ্বস্ত হতে পারছে কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কেননা একই ধরনের আশ্বাস নরেন্দ্র মোদি এবং তার পূর্বসূরি মনমোহন সিং তিস্তার ব্যাপারে বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই মৌখিক আশ্বাসকে কতটা গুরুত্বের সাথে নেয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতকে ফেনী নদী থেকে যে পরিমাণ পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সম্মতি জানিয়েছে তার পরিমাণ খুব একটা বেশি না। এতে ত্রিপুরার সাবরুম এলাকার মানুষের খাবার পানির চাহিদা মিটবে। ত্রিপুরার সাথে আমাদের বৈরী কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সেই দিক থেকে এটা বড় ইস্যু হতো না। কিন্তু এর একটা প্রতীকী মূল্য রয়েছে। আমাদের মূল চাওয়া তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির কোনো অগ্রগতি হলো না। অন্য দিকে ফেনী নদীর পানি ভারতকে ব্যবহার করতে দিলাম। তাই আমার মনে হয় এ ধরনের চুক্তি এখন না করলেই হতো। সময়টা এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর। ত্রিপুরার মানুষ ফেনী নদীর পানি ছাড়াই এত দিন চলেছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে পারত। বিষয়টা এখন দৃষ্টিকটু ঠেকছে।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সরকার আগেই দিয়েছে। এখন এর বিধি-বিধান সই হ লা। এটা থেকে ভারত- বিশেষ করে তাদের ভূমিবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকৃত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে এলপিজি রফতানি ভারতের জন্য বিরাট কোনো অর্জন বলে আমি মনে করি না। কেননা এলপিজি আমরা আমদানি করি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এলপিজি আমদানি করে নিশ্চয়ই অপেক্ষাকৃত বেশি দামেই ভারতের কাছে তা বিক্রি করবে।

দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিচ্ছে। দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তাই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, জেআরসি ছয় বছর পর বৈঠকে বসেছে। আগামী বছরও এ বৈঠক হবে। তারা দুই দেশের সব অভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

এনআরসি নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে গড়ায়, সে দিকে বাংলাদেশ সতর্ক নজর রাখছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, এনআরসি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদি ইস্যুটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শহীদুল হক বলেন, এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশ চোখ-কান খোলা রেখেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877