স্বদেশ ডেস্ক:
ভারতের সিকিমে ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধেয়ে আসা পানি কমার সাথে সাথে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা অববাহিকায় দু’দিনে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশে দিয়েছে নদীপাড়ের মানুষ। তাদের হাতে সুতা ও চেহারা দেখে পুলিশের ধারণা, এসব লাশ ভারতের। এদের মধ্যে একজনের লাশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পতাকা বৈঠকে মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন ফারুক জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ পাকার মাথা এলাকায় তিস্তার চরে এক যুবকের (৩৪) লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে আমরা তার লাশ উদ্ধার করি। একই স্থানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায়ও একটি লাশের (৩) খবর পাই। পরে সেটাও উদ্ধার করি। এখনও তাদের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। তবে তাদের শরীরের গঠন ও হাতের সুতা দেখে ধারণা করা হচ্ছে যে তারা ভারতীয় নাগরিক। সিকিমের বন্যার পানিতে ভেসে আসতে পারে তারা।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষিবাহিনীর সাথে কথা বলে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে ওই দু’টি লাশ দেখে আমাদের খবর দেয় স্থানীয়রা।
এদিকে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার ওসি মো: শাহ আলম জানান, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সেন্দুরনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিস্তা নদীতে আরো একজনের লাশ ভেসে উঠার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠাই। সেখান থেকেও একজন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে পরিচয় তাদেরও সনাক্ত যায়নি। স্থানীয় মানুষ ও আমাদের ধারণা, লাশটি ভারতীয় নাগরিকের।
রংপুরের গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি দুলাল মিয়া জানান, স্থানীয় লোকজন থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক এলাকা থেকে একজন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার লাশটি বস্ত্রবিহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ওসি আরো জানান, তার হাতে সুতা থাকায় মনে হচ্ছে বন্যার পানিতে ভেসে আসা ভারতীয় নাগরিক তিনি। তবে এখনো পরিচয় সনাক্ত হয়নি।
ডিমলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লাইছুর রহমান জানান, বৃস্পতিবার দুপুরে উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর কিছামত ছাতনাই চরে এক যুবকের লাশ দেখে এলাকাবাসী পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেয়। আমরা ঘটনাস্থলে যাই। লাশটি ভারত থেকে ভেসে আসায় ওই দেশের বিএসএফকে খবর দেয়া হয়। পরে দুপুর ২টার দিকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়। বিএসএফ লাশটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে সনাক্ত করেন।
উল্লেখ্য, মেঘভাঙা বৃষ্টি ও দক্ষিণ লোনাক লেক উপচে বিপুল পানির স্রোতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারতের সিকিম রাজ্য। বুধবার গোটা দিনজুড়ে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তিস্তা। এ কারণে ধেয়ে আসা কাদা-ঘোলা পানির ঘূর্ণিতে ভেসে যায় বহু লাশ। বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বুধবার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ৫১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হয়। পানি কমতে থাকায় তিস্তা তীরবর্তী কিছু কিছু এলাকায় চর জাগে। জনগণ মাছ ধরতে গিয়ে এসব লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।