স্বদেশ ডেস্ক:
সংগঠনের স্বাধীনতা ও সম্মিলিত আলোচনাসহ শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে কাজ করা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
শ্রমিক ও ইউনিয়ন সংগঠকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পাশাপাশি ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য এবং শ্রমিকদের ওপর শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কিত অনুশীলনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বের প্রতি জোর দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) কাউন্সিলের সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সহসভাপতি ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
উভয় প্রতিনিধি দলে বাণিজ্য, শ্রম, মেধা সম্পত্তি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সংস্থার কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
টিকফা কাউন্সিলের বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে- এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে শ্রম সংস্কার, সেইসাথে জলবায়ুতে বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে- এমন নীতি, মেধা সম্পত্তি সুরক্ষা ও প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করে, একটি ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশের শ্রম আইন (বিএলএ) সংশোধনগুলো পর্যালোচনা করছে। একইসাথে দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সম্মিলিত আলোচনার সুযোগ প্রসারিত করতে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে।
বাংলাদেশে ইউনিয়ন নিবন্ধন করার সময় শ্রমিকদের যে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তা দূর করতে কিছু প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসাথে আইনি সময়সীমার মধ্যে আবেদনগুলোকে সহজে নিবন্ধিত করা এবং নিরপেক্ষ ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে মার্কিন সরকার।
এছাড়াও বাংলাদেশকে শ্রম পরিদর্শন এবং প্রয়োগের জন্য আরো সম্পদ উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র গত এক বছরে বাংলাদেশের তথ্য সুরক্ষা আইন (ডিপিএ) নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক সংলাপের প্রশংসা করেছে।
উভয় পক্ষই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে আস্থা নিশ্চিত করার সাথে সাথে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেক্টরের উন্নতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছে।
ডিপিএ খসড়ার বাংলাদেশের নতুন সংস্করণে আগের সংস্করণগুলোর উন্নতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফৌজদারি দণ্ড অপসারণ, ব্যক্তিগত তথ্যে ডিপিএ’র সুযোগ সীমাবদ্ধ করা এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্য প্রক্রিয়া করে এমন সংস্থাগুলোর আবেদন সীমিত করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা রফতানির ক্ষেত্রে তুলা জীবানুমুক্ত করতে রাসায়নিক ধোঁয়া দেয়ার বিষয়টি বাতিল করায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নিয়ম চলে আসছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কৃষি জৈবপ্রযুক্তি সংলাপে সহযোগিতা করেছে। উভয় দেশ চলতি বছর তাদের সম্পৃক্ততা আরো বাড়াতে আগ্রহী।
উভয় দেশই অর্থনীতিতে উদ্ভাবন রক্ষার জন্য মেধা সম্পত্তির (আইপি) সুরক্ষা ও প্রয়োগের গুরুত্ব স্বীকার করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কপিরাইট আইন সংশোধন, শিল্প নকশা আইন, পেটেন্ট বিল ও বাস্তবায়ন প্রবিধান এবং আইপিআর এনফোর্সমেন্ট (আমদানি ও রপ্তানি) বিধিসহ আইপি-সম্পর্কিত আইন ও বিধিমালার সংশোধনের জন্য চলমান প্রক্রিয়াগুলোতে বাংলাদেশের সাথে জড়িত থাকার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ ছাড়া ইউএসটিআর-এর ২০২৩ সালের বিশেষ ৩০১ নম্বর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নকল পোশাকের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এসব নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন ডিসি-তে ২০২৪ সালে আগামী টিকফা কাউন্সিলিং বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে উভয় প্রতিনিধিদল এই গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
সূত্র : ইউএনবি