স্বদেশ ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমি নিজের জীবনের রিস্ক নিয়া এই শহরের ভারসাম্য রক্ষা করি। যারা কথা বলতে পারেন না, যাদের দাবিয়ে রেখে অত্যাচার করা হয়, তারা অন্তত একবার হলেও আমার কথা চিন্তা করেন। এই শহরের বহু মানুষের প্রাণের কথা, মনের কথা আল্লাহ আমার মুখ দিয়ে বলায়।’
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিটি করপোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।
আইভী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি, মনে-প্রাণে আমি এই দলের একজন কর্মী। আমি কিছু বলতে গেলেই এক শ্রেণির লোক বলবে, আমি দলের বিরুদ্ধে কথা বলছি। কারণ আপনারা জানেন, আমার দলেরই শক্তিশালী একটি বলয় আমার কথাকে কাটপেস্ট করে বিভিন্নভাবে প্রচার করে। তারপরও আমি থেমে নেই, কথা বলার চেষ্টা করি, কাজ করে যাই। এমপিগিরি করা সোজা। আমার মনে হয় মেয়রগিরি করা আমার যথেষ্ট হইছে। আমার ৫ আসনের এমপি নমিনেশন চাওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমি এমপির নমিনেশন চাইলে এই শহরের অনেকের মাথা গরম হইয়া যাইবো। আমি কারো মাথা গরম করতে চাই না। আমি ঠান্ডা মাথায় আপনাদের নিয়ে কাজ করতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমারে যেইভাবে আপনারা দশ কথা শুনাইয়া দিতে পারেন সেইভাবে তো ডিসি-এসপি সাহেবকে বলতে পারেন না। অনুরোধ করতে করতে অস্থির হয়ে যাই। আমাকেও তাদের নমনীয় হয়ে কথা বলতে হয়, তারপরও কাজ হয় না। কারণ, এই শহরের কোনো ভাগাভাগির মধ্যে আইভী নাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কোনো লোক কোথাও টাকা তোলে না। দ্বিগুবাবুর বাজার ও কালিরবাজারে কারা চাঁদাবাজি করে সেইটা আপনিও ভালো করে জানেন আমিও জানি। দ্বিগুবাবুর বাজারের চাঁদাবাজি আজকে থেকে না, দীর্ঘদিন যাবৎ এইটা চলছে। শায়েস্তা খাঁ রোডে কারা কাঁচাবাজার বসাচ্ছে তা আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। মীর জুমলা রোডে যান চলাচলের উদ্যোগ আমরা নিলাম, তৎকালীন এসপি সাহেব চেষ্টাও করেছিলেন। সিএনজি স্ট্যান্ড করারও চেষ্টা করলাম, কিন্তু কেউ সেখানে যেতে রাজি হলো না।’
‘যেই শহরে বলার পরে কোনো প্রতিকার নাই, যেখানে মেয়র-সাংবাদিক বললেও কিছু হয় না। একমাত্র দুইজন এমপি বলার পরে প্রশাসন কাজ করে, নাহলে কিছুই করে না। পাঁচ বছর আগে এমপি সেলিম ওসমান সাহেব আমার বাজেট অধিবেশনে আসেন, তখন অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ডের কথা উঠলো। যেই ট্রাক স্ট্যান্ড হাইকোর্টের নির্দেশনায়ও উঠলো না, সেই ট্রাক স্ট্যান্ড সেলিম ওসমান ঘোষণা দেয়ার পরই উঠে গেল। ছয় মাস ট্রাক এইখানে ছিল না। তাহলে হাইকোর্ট মাইনা তো লাভ নাই, এমপি সাহেবরেই তো মানতে পারি,’ যোগ করেন আইভী।
তিনি বলেন, ‘অটোরিকশায় সাংবাদিক, পুলিশ, এমপির স্টিকার লাগানো থাকে। এই স্টিকার লাগানো গাড়ি পুলিশ ধরতেও সাহস পায় না। সেই গাড়িগুলো আমরা ধরে নিয়ে আসি। আপনারা অনেকেই জানেন এই কাজ আমার না তারপরও আমাকে বলেন। কারণ আপনারা অন্যদের বলতে পারেন না। মেয়র তো ম্যাজিক জানে না যে রাতারাতি সব ঠিক করে ফেলবে। অনেক হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।’
সিটি মেয়র বলেন, ‘আমি যদি এখন এসপিকে কিছু বললে উনি শুনবেন না। ডিসি সাহেবরে বললে শুনবেন না। কারণ আমার তো কোনো বাহিনী নাই। আমি তো কাউরে পিস্তল ঠেক দিতে পারবো না। না পারবো টাকা দিতে, না পারবো পিস্তল দিতে, না পারবো বাহিনী নিয়ে অ্যাটাক করতে। আমি তো আপনাদের মতো, আপনাদের নিয়েই প্রতিবাদ করতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের রাস্তায় বাসের পারমিশন দেয় ডিসি সাহেব। সারা নারায়ণগঞ্জ দখলে কিন্তু আমরা কেউ প্রতিবাদ করি না। বাসের বর্ধিত ভাড়ার কথা বলতে গিয়ে রফিউর রাব্বি তার সন্তানকে হারিয়েছেন। আপনারা কেউ তো কিছু বলেন না।’
শহরের সংকটগুলো নিরসনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি মো: নুরুদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আমীর হুসাইন স্মিথ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম।