স্বদেশ ডেস্ক:
বান্দাহ আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে তার শুকরিয়া তথা প্রশংসা করে। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দাহর অনুগ্রহ ও আনুগত্য কবুল করে তার প্রশংসা তথা শুকরিয়া করেন।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা আমার শুকরিয়া করো এবং কুফরি করো না’ (সূরা বাকারা-১৫২)। আরো ইরশাদ করেন- ‘হে বিশ^াসীগণ! আমার প্রদত্ত পবিত্র রিজিক ভক্ষণ করো এবং আমার শুকরিয়া করো’ (সূরা বাকারা-১৭২)। অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যে রিজিক দিয়েছেন তা ভক্ষণ করো এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করো’ (সূরা নাহল-১১৪)।
শোকরের ফল : শোকরের ফল সুদূরপ্রসারী। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি শুকরিয়া করে সে যেন নিজের জন্যই শুকরিয়া করে’ (সূরা আন নামল-৪০)। ‘এভাবে শোকর গ্রহণকারীর আমি প্রতিদান দিয়ে থাকি’ (সূরা আল কামার-৩৫)। ‘যদি তোমরা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দেবো’ (সূরা ইবরাহিম-৭)।
শুকরিয়ার তাওফিক কামনা : হজরত সুলায়মান আ: শোকর আদায় করার তাওফিকদানের জন্য মহান আল্লাহর তাওফিক কামনা করেছেন। যেমন আল্লাহর বাণী- ‘হজরত সুলায়মান আ: পিঁপড়ার নেতার কথা শুনে মৃদু হাসেন এবং বলেন, হে আমার রব, আপনি আমাকে তাওফিক দান করেন যাতে (এ পিপিলিকার ব্যাপারেও আমি অমনোযোগী না হই এবং) আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে আপনি যেসব নিয়ামত দান করেছেন, আমি যেন তার শুকরিয়া আদায় করতে পারি’ (সূরা আন নামল-১৯)।
শুকরিয়া কেন করতে হবে : মানুষ আল্লাহ তায়ালার অগণিত নিয়ামত ভোগ করছে। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন- ‘আমি তোমাদেরকে এত নিয়ামত দিয়েছি তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না। সুতরাং এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় আবশ্যক।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘অতঃপর আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি, আশা করা গিয়েছিল যে, তোমরা শুকরিয়া আদায় করবে’ (সূরা আল বাকারা-৫২)। অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘অতঃপর তোমাদের (তূর পাহাড়ে) এই মৃত্যুর পর আমি তোমাদের পুনরায় জীবন দান করলাম, আশা করা গিয়েছিল যে, শুকরিয়া আদায় করবে’ (সূরা আল বাকারা-৫৬)। আরো ইরশাদ করেন- ‘বদর যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে বিজয় ও সাহায্য দান করেছিলেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা (এ বিষয়ের জন্য তার) শুকরিয়া আদায় করবে’ (সূরা আল ইমরান-১২৩)। আরো ইরশাদ করেন- ‘এভাবেই আমি এদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করতে পারো’ (সূরা আল হাজ-৩৬)।
মানুষ অকৃতজ্ঞ : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তঃকরণ দান করেছেন, কিন্তু তোমরা খুবই তার শোকর আদায় করো’ (সূরা আস সাজদা-৯)। অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সদা অনুগ্রহশীল; কিন্তু মানুষদের অধিকাংশ কৃতজ্ঞতা আদায় করে না’ (সূরা আল বাকারা-২৪৩, সূরা ইউনুস-৬০)।
আল্লাহর জিজ্ঞাসা : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি জমিনে সৃষ্টি করি নানা প্রকার খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান, প্রবাহিত করি অসংখ্য নদী-নালার প্রস্রবণ, যাতে করে তারা এর ফলমূল উপভোগ করতে পারে, এগুলোর কোনোটিই তো তাদের হাতের অর্জন নয়, তারপরও কি তারা কৃতজ্ঞতা আদায় করবে না’ (সূরা ইয়াছিন : ৩৪-৩৫)? আরো ইরশাদ করেন- ‘পশুর মধ্যে রয়েছে তাদের জন্য উপকারিতা, আরো রয়েছে পানীয় বস্তু; তবুও কি তারা তার শোকর আদায় করবে না’ (সূরা ইয়াছিন-৭৩)। অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘হে দাউদ পরিবারের লোকেরা তোমরা আমার শোকর আদায় করতে নেক কাজ করো; আমার বান্দাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক মানুষই শোকর আদায় করে’ (সূরা সাবা-১৩)। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে বেশি শোকর আদায় করেছেন নূহ আ:। আল্লাহ তায়ালা তার প্রশংসা করে বলেছেন- ‘অবশ্যই সে ছিল আমার কৃতজ্ঞশীল বান্দা’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩)।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী