স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, ইসলামী চিন্তাবিদ, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠান ও এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঢাকা ও কক্সবাজারে ৭ হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, এসব মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকায় একটি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
জামায়াতে ইসলামির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি মামলা করেছে পুলিশ। আর প্রায় ২৫৫ জনের মতো নেতাকর্মীকে বিভিন্ন জেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ১৪ অগাস্ট ঢাকায় শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোববার তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
মৃত্যুর পর তার লাশ ঢাকা থেকে পিরোজপুরে নেয়াকে কেন্দ্র করে শাহবাগ এলাকায় পুলিশের সাথে তার সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরপরের দিন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
ঢাকায় ৫০০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, পুলিশের গাড়ি পোড়ানো, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল ফোটানোর অভিযোগে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে বাকিদের অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
আশরাফ বলেন, ‘সাঈদী সাহেবের ছেলে যারা অঙ্গীকার দিয়ে পরে আলটিমেটলি তাদের শিবির নেতাকর্মীদের উত্তেজিত করে ফেলছে। মানে অঙ্গীকার রক্ষার পরিবর্তে তারা আরো তাদেরকে খেপিয়ে তুলেছিল।’
এ মামলায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। যাচাই-বাছাইয়ের পর আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন ডেপুটি কমিশনার।
চকোরিয়ায় নিহত ১, মামলা একাধিক
আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
১৬ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী দাবি করে, ১৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে চকোরিয়ায় ফোরকান উদ্দিন নামে একজন নিহত ও বেশ কয়েক জন আহত হয়েছে।
এছাড়া পুলিশের সাথে সংঘর্ষে চট্টগ্রামে ২০ জন আহত হয়েছে বলেও জামায়াতের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি কিভাবে নিহত হয়েছে, ময়নাতদন্তের আগে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় পুলিশ বন্দুক বা এ ধরনের কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি।’
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখনো পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
‘তার স্ত্রী মামলায় উল্লেখ করেছেন যে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার স্বামী পরে থাকার পরে ওখানকার স্থানীয় কিছু লোকজন, উপস্থিত কিছু লোকজন তারা তার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে ডাক্তার তার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করে।’
এদিকে, পুলিশের সাথে আল্লামা সাঈদীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় আলাদা আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ। সেখানে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এরমধ্যে ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, অরাজকতা, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ এবং গাড়ি ভাঙচুরসহ সরকারি সম্পদ নষ্ট করেছে তারা। একই সাথে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করা হয়েছে।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুর পর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রশাসনের অনুমতি না থাকার পরও তার সমর্থকরা বিভিন্ন জায়গায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত করেছে।
চকোরিয়ার বাস স্ট্যান্ডের কাছে চিরিঙ্গা নামে একটি স্থানে দুই দফা গায়েবানা জানাজা পরার পর ওই এলাকা দিয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একটি কাজ শেষে ফিরে আসার সময় পুলিশের ওপর মারমুখী হয়ে উঠে উপস্থিত লোকজন।
তারা ওইসময় পুলিশের ওপরে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে এবং থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গাড়িটিতে ভাংচুর করে। ভাংচুর করা হয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাড়িতেও।
ওইসময় কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ‘বাঁশি বাজিয়ে’ এবং ‘ধাওয়া দিয়ে’ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
‘পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি, কয়েক জন ইনজুরড ব্যক্তিকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে যাদের মধ্যে একজন ব্রট ডেড। সে ইনজুরড হওয়ার কারণেই হতে পারে।’
একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব
জামায়াত নেতা আল্লাহু দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর আগে অসুস্থ থাকা অবস্থায় তাকে চিকিৎসা সেবা দানকারী একজন চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, আল্লামা সাঈদীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে অপপ্রচার ও তার প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ওই চিকিৎসক।
এর ধারাবাহিকতায় ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব দাবি করেছে, গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য।
সূত্র : বিবিসি