স্বদেশ ডেস্ক:
সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারে সন্নিকটে। নভেম্বরের যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণার কথাও বলছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোপুরি মনোযোগী হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও তার মিত্রদের এক দফার আন্দোলন রাজপথে মোকাবেলার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিও পুরোদমে নিতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে সে বার্তাই দিয়েছেন দলটির প্রধান। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করে তৃণমূলকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী বার্তা দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। বিভাগীয় শহরগুলোতে সফর করে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিভাগীয় শহর সফর সম্পন্ন করার পরই গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরেও সফর করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে সেটি নির্ভর করছে বিএনপির আন্দোলনের গতিবিধির ওপর। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একসাথেই চলবে। বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। আর আমাদের লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়া। সে লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো, সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা অর্থাৎ আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। এ ছাড়াও আমরা আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি, আমরা ভবিষ্যতে জনগণকে নিয়ে কী ভাবছি সেটিও তুলে ধরছি। গত ৬ আগস্ট বর্ধিত সভায়ও আমাদের নেত্রী তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূল নেতারা দিকনির্দেশনা পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে এলাকায় ফিরে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেত্রীর বিভাগীয় শহর সফর শেষ হওয়ার পর বৃহত্তর জেলাগুলো সফর করার জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে। অনেক জেলা শহরে যাওয়া হয়নি। সেখানেও যাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনের আগেই কেন্দ্রের সর্বশক্তি নিয়োগ করে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করাই দলটির অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন মোকাবেলা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একসাথে নিতে হচ্ছে। এ জন্য গত ৬ আগস্ট গণভবনে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভা করে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার জন্য স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দীর্ঘ দিন থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দৃশ্যমান, যা গণভবনে জেলার নেতাদের বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট হয়েছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সমন্বয়ে ৭৪টি সাংগঠনিক জেলায় আট বিভাগীয় টিম নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত গঠিত সাংগঠনিক টিমগুলো সারা দেশে নির্বাচনী ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও জেলা-উপজেলাপর্যায়ে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশগুলোতে বিগত দিনে বিএনপি জোটের আন্দোলন চলাকালে দেশব্যাপী চালানো ভয়াবহ নাশকতার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়নের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দলটির নেতারা মনে করেন, এতে আগামী নির্বাচন উপলক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও দিবসভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে বড় আকারে পালন করা হবে, যা আগামী নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের শোডাউন হিসেবে কাজ করবে। শোকের মাস আগস্ট শেষ হলেই সর্বশেষ প্রস্তুতি হিসেবে পুরো দল প্রকাশ্যে নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে নামবেন। এটা বিএনপি ও তার মিত্র জোটের অবস্থান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের গতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর সফরের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র বলছে, দলের মনোনয়নের বিষয়টি দেখভাল করবেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। বিশাল জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখেই জনগণের চাহিদানুযায়ী একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। জনগণ কী চায় সেই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করার চিন্তা করা হচ্ছে। বিশেষভাবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের মানুষ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সঙ্কটে পড়েছে, ডলার সঙ্কটে ব্যবসাবাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ওই সব মানুষের কথা চিন্তা করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশকে শক্তিশালী করা এবং বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়াও দলীয় মনোনয়নের পরই নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে নামাতে চায় দলটির হাইকমান্ড। এ জন্য তৃণমূলকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন দলটির প্রধান।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের নেত্রী ইতোমধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা কাজ করছি। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি নেয়া দরকার আমরা এখন থেকেই তা শুরু করেছি। তিনি বলেন, মনোনয়নের বিষয়টি দেখবেন আমাদের দলের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর আমরা যে কাজটি করব তাহলো তৃণমূলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেটি সমাধান করা এবং নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো।