স্বদেশ ডেস্ক:
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ফ্লুইড স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১০-১২ গুণ। রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলো স্যালাইন সঙ্কটে পড়তে পারে।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। বিশেষত আইভি স্যালাইন। তবে দেশে যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ওষুধের দোকানে কথা বলে এ আশঙ্কার কথা জানা যায়।
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মাতুয়াইল শিশ মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে।
এসব হাসপতালে ঘুরে রোগীদের সাথে কথা বলে স্যালাইন সঙ্কটের কথা জানা গেছে।
রোগীদের আশঙ্কা, সরকারি খরচে দেয়া আইভি ফ্লুইড সরবরাহ শিগগির বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে থাকলে স্যালাইন সঙ্কটে পড়তে পারে।
সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সদর হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ করে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)।
তবে স্যালাইনের নিজস্ব উৎপাদন না থাকায় বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মা কোম্পানি থেকে কিনে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির বলেন, স্যালাইন তো আমরা উৎপাদন করি না। বেসরকারি ফার্মা কোম্পানিগুলো থেকে কিনতে হয়। আমরা আবার খুচরা মূল্যে স্যালাইন বা ওষুধ কিনি না। আর কোম্পানিগুলোও রাতারাতি এত চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। পারলেও প্রচলিত দামে তো কিনতে পারি না।
ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কারণে গড়ে কী পরিমাণ ফ্লুইডের চাহিদা বেড়েছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত বছর ৬০ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদা ছিল। এরমধ্যে ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ব্যাগ দিতে পেরেছি। এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০-১২ গুণ বেশি ফ্লুইড লাগছে। ইডিসিএলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন না থাকায় বেরসকারি বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানি থেকে কিনে সারাদেশে হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু এখন যে হারে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে, তাতে স্যালাইনের সঙ্কর প্রকট হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চাহিদা এখন প্রায় ১০-১২ গুণ। এটি সামাল দেয়া একটু কঠিন হবে। ডেক্সট্রোজেন ৫ শতাংশ ও সোডিয়াম ক্লোরাইড দশমিক ৯ শতাংশের এক ব্যাগ (১০০০ মিলিলিটার) স্যালাইন ৮৭ টাকা এবং বেবি স্যালাইন ৬৩ টাকা রাখা হচ্ছে। এভাবে ৫০০ মিলিসহ সব স্যালাইন স্বল্প দামে সব সরকারি হাসপাতালে সরবারহ করা হচ্ছে।
ইডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ফ্লুইড প্রয়োজন হয়। নরমাল স্যালাইন, ডিএনএস, হার্ডসন, প্লাজমাসল ইত্যাদি। কিন্তু ইডিসিএল নিজস্বভাবে স্যালাইন তৈরি করে না। সারাদেশে ইডিসিএলের পাঁচটি প্ল্যান্টের মধ্যে গোপালগঞ্জে একটি ইউনিট রয়েছে। যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কিছু ওষুধ তৈরি হচ্ছে। শিগগিরই আমরা সব ধরনের ফ্লুইড তৈরিতে যাব।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো: নিয়াতুজ্জামান বলেন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৫০০ শয্যার। হাসপাতালটিতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন প্রায় ৩ গুণ। জুলাই মাসে ডেঙ্গুরোগীদের চাপ বাড়ায় স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ আইভি ফ্লুইড প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে যা স্টকে আছে তা আগামী সপ্তাহেই ঘাটতি দেখা দেবে। তখন যদি আরো বেশি রোগী ভর্তি হয় তাহলে স্যালাইন সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের ৮০ ভাগেরই স্যালাইন লাগে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসায় আইভি ফ্লুইডের প্রয়োজনীতা বাড়ছে। ইডিসিএলকে মাসে একবার স্যালাইনের চাহিদা দেয়া হতো। এখন প্রতি সপ্তাহে চাহিদা দিতে হচ্ছে। ১৫ হাজারের বেশি স্যালাইনের ব্যাগ এখনো মজুদ আছে। এগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ চলবে। রোগী সংখ্যা যদি আরো বাড়তে থাকে তাহলে আগামী ১০/১২ দিন পর স্যালাইন সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে।
ইডিসিএল থেকে জানা যায়, আপাতত বেক্সিমকো, একমি, পপুলার, অপসোনিন, ওরিয়ন ও লিবরা এ ছয়টি কোম্পানি থেকে স্যালাইন কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেসব হাসপাতালে স্যালাইনের চাহিদা বেশি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাইরে থেকে কিনতে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হার বৃদ্ধির কারণে ফ্লুইড স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে এটি সঠিক। এ বিষয়ে যাতে স্যালাইন সঙ্কর না হয় এবং সরবরাহ কীভাবে বাড়ানো যায় ইডিসিএল এর সাথে কথা বলব আমরা। তবে স্যালাইন সঙ্কটের আশঙ্কায় আতঙ্কের কিছু নেই।
সূত্র : ইউএনবি